বাগডোগর, ৫ মার্চঃ দিনকয়েক আগের কথা। বিমানে কলকাতা থেকে সওয়র হয়ে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পর মাকে নিয়ে এক তরুণী খুবই সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন। হঠাৎই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বৃদ্ধাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু বিমানবন্দরের নিজস্ব কোনো অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা না থাকায় সমস্যা রীতিমতো বড়ো হয়ে দাঁড়ায়। শেষমেশ বেসরকারি যানচালকদের সহায়তায় ওই মহিলাকে ট্যাক্সিতে তুলে কোনোমতে বাগডোগরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনো মেডিকেল কিট ছাড়াই তাঁকে বিমানবন্দর থেকে বেশ কিছুটা দূরে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে নিয়ে যাওয়ার সময় যথেষ্টই বিপদের আশঙ্কা ছিল।
সপ্তাহখানেক আগে ফের একই ঘটনা। এবারে বিকেলের উড়ানে দিল্লি যাওয়ার আগে এক মহিলা হঠাৎ বিমানবন্দরেই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রেও বেসরকারি যানচালকরাই মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়ান। ওই মহিলাকেও কোনোমতে ট্যাক্সিতে করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। যাত্রী পরিবহণের নিরিখে দেশের সেরা তিনটি বিমানবন্দরের অন্যতম হিসাবে বাগডোগরা বিমানবন্দর সম্প্রতি মেজর তকমা পেয়েছে। অথচ এমন একটি বিমানবন্দরে জরুরি প্রয়োজনের জন্য আজ পর্যন্ত কোনো অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা না থাকায যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
পাশাপাশি, বিমানবন্দরে একটি মেডিকেল রুম থাকলেও সেখানে কর্তপক্ষের নিজস্ব কোনো চিকিৎসক বা নার্স না থাকাতেও প্রশ্ন উঠেছে। এরই জেরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি পরিসেবা না থাকা একটি বিমানবন্দরকে কীভাবে দেশের অন্যতম সেরা বিমানবন্দরের তকমা দেওয়া হয়, তা নিয়ে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি বুঝে সমস্যা মেটাতে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে।
বাগডোগরা বিমানবন্দর সূত্রে খবর, এই বিমানবন্দর দিয়ে রোজ গড়ে ৩২ জোড়া বিমান যাতাযাত করে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই বিমানবন্দর দিয়ে ২২ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যে হারে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে চলতি অর্থবছরে এই বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত ৩০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াতের সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে উত্তরোত্তর যাত্রীসংখ্যা বেড়ে চলায় অমৃতসর ও বারাণসীর পাশাপাশি এই বিমানবন্দরটিকেও মেজর তকমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন একটি বিমানবন্দরের নিজস্ব কোনো অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবা নেই।
জরুরি প্রযোজনে বাযুসেনার অ্যাম্বুলেন্সের উপরই যাত্রীদের নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বাহিনীর কিছু নিয়মকানুন মেনে সেই অ্যাম্বুলেন্সের কাজে নামতে প্রায়ই কিছুটা দেরি হয়। অন্যদিকে, বাগডোগরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অ্যাম্বুলেন্স বিমানবন্দরে পৌঁছাতে বেশ কিছুটা সময় নেয়। জরুরি প্রযোজনে যাত্রীদের শুশ্রূষার জন্য বিমানবন্দরে একটি মেডিকেল রুম থাকলেও সেটি থেকে প্রয়োজনীয় পরিসেবা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এই মেডিকেল রুমে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স পরিসেবা দেন। কিন্তু বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দাযিত্বে থাকা সিআইএসএফ-এর সাব-ইনস্পেকটর পদমর্যাদার এক আধিকারিকের কথায়, এই মেডিকেল রুমে কখনও কোনো চিকিৎসককে দেখা যায় না। নার্স থাকলেও জরুরি প্রয়োজনের সময় যাত্রীদের শুশ্রূষায় রীতিমতো সমস্যা হয়। একই অভিযোগে বিভিন্ন উড়ান সংস্থার কর্মী, যানবাহন চালকরাও সরব হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে সমস্যা মেটাতে কর্তৃপক্ষ অবশ্য উদ্যোগী হয়েছে। বাগডোগরা বিমানবন্দরের ডিরেক্টর সুব্রহ্মণিয়ম পি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীদের শুশ্রূষার জন্য বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে একটি মেডিকেল রুমের ব্যবস্থা আছে। বিমানবন্দরে ব্যবস্থা না থাকলেও প্রয়োজনে ডাকলেই বাগডোগরা থেকে অ্যাম্বুলেন্স এখানে চলে আসে। তবে সমস্যা বেড়ে চলায় শীঘ্রই বিমানবন্দরের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স পরিসেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে ডিরেক্টর জানিয়েছেন।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2SL4l9A
March 05, 2019 at 03:33PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন