নিউইয়র্ক, ১৪ এপ্রিল- নিউইয়র্কে তখন রাতের আঁধার। ম্যানহাটনের ইস্ট ব্রডওয়ের পাতাল রেল ষ্টেশনে একা দায়িত্ব পালন করছিলেন একজন।হঠাৎ দেখলেন নারীকে উত্তক্ত করছে পাঁচজন মদ্যপ। ছুটে আসেন ঐ পুলিশ অফিসার। মদ্যপরাও তেড়ে এল তারদিকে। সাথে সাথে কারাতে স্টাইলে আক্রমন প্রতিহত করতে থাকলেন। পাশাপাশি লাঠি উঁচিয়ে চিৎকার করে অনুরোধ করতে থাকলেন পিছিয়ে যাওয়ার জন্য। বলতে থাকেন, থামো। আমি তোমাদের আঘাত করতে চাইনা। কিন্তু তারা না থামায় তিনি শায়েস্তা করলেন সবকটিকে। যার কথা বলছি, তিনি বাংলাদেশী বংশদ্ভুত মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা সাইদ আলী। ঘটনাটি গত বছরের ২৩ ডিসেম্বরের। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রটি দেখে বিশ্ববাসী থ বনে যান। সিনেমার দৃশ্যকেও হারমানানো বাস্তব এ ঘটনাটি ঘটে নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনের ইস্ট ব্রডওয়ের পাতাল রেল ষ্টেশনে। আর নায়কের ভঙ্গিতে মারমুখী মাতালদের কুপোকাত করা লোকটি আামদের অহংকার, সাঈদ আলী। বাংলাদেশী বংশদ্ভুত একজন আমেরিকান পুলিশ সদস্য। তিনি নিউইয়র্ক পুলিশ ডিভিশনের কর্মকর্তা। ৩৬ বছর বয়সী সাঈদ আলীর জন্ম বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে। ৩ বছর বয়সে মা বাবার সাথে পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। পড়াশোনা শেষে কর্মজীবন শুরু করেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে। ৬ বছর আগে যোগ দিয়েছেন নিউইয়র্ক পুলিশে। সাহসিকতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। নিউইয়র্ক পুলিশের আইন অনুযায়ী একজন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তার দিকে কেউ মারমুখী হয়ে তেড়ে এলে, কর্তব্যরত অফিসার গুলি ছোঁড়তে পারেন। আর এমন ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের নিত্যসঙ্গী। এ কারনে দেশটিতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানীর অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু সাঈদ ঘটনালগ্নে নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে ভেবেও কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন নি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সহকর্মীদের তাৎক্ষনিক বারতা পাঠিয়ে নিজেই সামাল দেন পরিস্থিতি। আর এ কারনেই তিনি প্রশংসা এবং বাহ্বার অধিকারী হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া, সাধারণ মানুষসহ উচ্চ পদে কর্তা ব্যক্তিদেরও। ইন্টারনেটে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার ঘটনা আর দশটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও চিত্রের মতই। ঘটনার সময় প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত কোন এক যাত্রী দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন। ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি ২/১ ঘণ্টার ব্যাবধানে ভাইরাল হয়ে যায়। সবাই সাঈদ আলীর প্রশংসনীয় এই কাজের ভিডিওটি শেয়ার করতে থাকেন। পরদিন (২৪ ডিসেম্বর) ম্যাডি নামক এক ব্যক্তি টুইটার প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা ভিডিওটি ১জানুয়ারি পর্যন্ত দেখেছেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। কিন্তু এসবের কিছুই তখনও জানতেন না ঘটনার নায়ক সাঈদ আলী। এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, জানতাম না মুহূর্তটি কেউ ভিডিও করেছে। সে সময় তো দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলাম। পরদিন সকালে বিভিন্ন জনের ফোনে জানতে পারি। এরপর সাঈদ আলীকে নিয়ে এতোটাই আলোড়ন হয় যে ২৬ ডিসেম্বর তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রের দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস। ফলাও করে সংবাদটি প্রচার করে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল। সাঈদ আলী সম্মাননা হিসেবে পেয়েছেন নিউইয়র্ক শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রশংসা । টুইটার প্রোফাইল থেকে সাঈদ আলীকে নিয়ে টুইট করেছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল। নগরীর ব্রকলিনের কাউন্সিল ম্যান চেইন এম ডাচ নিজ হাতে তুলে দেন সাহসিকতার বিশেষ সনদ। সাঈদ আলী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ট্রাঞ্জিড ব্যুরোর সহকারী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভিন্সেন্ট কোগান বিবৃতি দিয়ে বলেন, অফিসার আলী মহৎ কাজ করেছেন। এছাড়াও প্রশংসা কুড়িয়েছেন নিউইয়র্ক পুলিশের প্যাট্রোলম্যান বেনোভেলেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পেট লিঞ্জ, বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের। অথচ, দুঃখজনক হলেও সত্য ২০১৭ সালে ইস্তাম্বুল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন কেনেডি (জেএফকে) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন সেনাসদস্য পরিচয় দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এন্ড ইমিগ্রেশন বিভাগের দীর্ঘ তল্লাশির মুখে পড়ে বিব্রত হতে হয়েছিল। তার অপরাধ, তিনি একজন মুসলিম। ১৫ মে, দুঃখ করে সাঈদ নিউইয়র্ক টাইমসে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, যারা বিমানবন্দর দিয়ে আসবে, তাদের মধ্যে কারো নামে আলী থাকলেই কি সে জঙ্গি সন্ধেহের তালিকায় থাকবে? সময়ের বদৌলতে আজ সেই সাঈদ আলীকেই বীরত্বের সম্মাননা দিলো নিউইয়র্কসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র। আর এতকিছুর সাথে উচ্চারিত হল একটি নাম, বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশেও যে সাঈদ আলীর মত বীরযোদ্ধার জন্ম হয়! আর/০৮:১৪/১৪ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2KBu5GR
April 14, 2019 at 03:11PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন