কলকাতা, ২৪ মে- শুভ্রাংশু রায়ের সাংবাদিক সম্মেলন এবং পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে শুভ্রাংশুকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা- শুক্রবারের এই ঘটনাক্রমের পিছনে কি কৌশলী মুকুল রায়ের বুদ্ধিই কাজ করেছে, জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, নিজের ঘর থেকেই বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটালেন চাণক্য মুকুল। শুক্রবার সকালে বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুর বিষ্ফোরক সাংবাদিক বৈঠকের পর বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে একটা দিনও দেরী করেনি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। যে তৃণমূল নির্বাচন চলাকালীন বা ফলপ্রকাশের পর এখনও পর্যন্ত সাংবাদিক বৈঠক করেনি, সেই দলই আজ সাংবাদিক বৈঠক করল শুভ্রাংশুকে বহিষ্কার করতে। রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, তৃণমূল দলটাকে হাতের তালুর মতো চেনেন মুকুল। ফলে তিনি জানতেন, শুভ্রাংশুর এদিনের বাক্যবাণ হজম হবে না তৃণমূলের। বাস্তবে হলও তাই। তৃণমূল থেকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হল বীজপুরের বিধায়ককে। অন্যদিকে আরেকটি মত হল, বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি মডেল তৈরি করলেন শুভ্রাংশু রায়। লোকসভার ফলে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পর তৃণমূলের ঘর ভাঙতে পদ্ম শিবির যে উঠে পড়ে লাগবে, সে বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত। তাই শুভ্রাশুর ঘটনা এ ক্ষেত্রে মডেল হয়ে থাকবে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু, রাজনৈতিক মহলে একটা ভিন্ন প্রশ্নও মাথা চাড়া দিয়েছে। তা হল, বাড়ির এই বিদ্রোহ কি নবান্ন ছুঁতে পারবে, নাকি রাজ্যপালের কাছে দাবি সনদ নিয়ে ছুটবে তৃণমূল ছুট বিধায়কদের দল? অনেকেই মনে করছে, আগামী ৬ মাসের মধ্য়ে দলবদলের প্রভাব পড়তে চলেছে রাজ্য বিধানসভায়। নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যের তৃণমূল সরকারের স্থায়িত্ব প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুকুল রায়। এর আগে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এসে বলে গিয়েছিলেন যে চল্লিশ তৃণমূল বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এরপর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ ভোট মিটতে বলেছিলেন, সংখ্যাটি ১০০। ফলে কাঁচরাপাড়ার বাড়ি থেকে যে বিদ্রোহের সূত্রপাত হল, তা রীতিমতো চর্চার বিষয়। প্রসঙ্গত, বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-কে বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন মুকুল রায়। তারপর বোলপুরের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা, বাগদার বিধায়ক দুলার বর, ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিং-দের দলে টেনে তৃণমূল ভাঙাতে শুরু করেন সেই দলের একদা প্রধান সেনাপতি। এদিন শুভ্রাংশুর ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলের নজর এখন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের দিকে। সম্প্রতি তিনিও নানা রকম মন্তব্য করেছেন। তবে, এই তালিকায় আর কোন কোন তৃণমূল নেতা থাকতে চলেছেন, এবার সেদিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই দিনটির জন্য়ই অপেক্ষা করেছিলেন কাঁচরাপাড়ার ঘটকরোডের বাসিন্দা। ব্যারাকপুর লোকসভা আসন জিতেছে বিজেপি। জয়ী প্রার্থী অর্জুন সিং-কে বিজেপিতে এনেছেন স্বয়ং মুকুল রায়ই। ওই লোকসভা এলাকার মধ্যেই পড়ছে বীজপুর বিধানসভা। সেই বীজপুরেরই বাসিন্দা মুকুল এবং বিধায়ক তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু। আর এই বীজপুরেও বড় ব্যবধানে জিতেছেন অর্জুন। ফলে এই পরিস্থিতিতে ব্যারাকপুরে অর্জুন সিংয়ের জয় এবং অন্য়দিকে বীজপুরে বিজেপির ভাল ফল- এই দুইয়ের সংযোগ ক্ষণকে হাতছাড়া করতে চাননি মুকুল-পুত্র। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একেবার ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছেন এই তৃণমূল বিধায়ক। একেই আগামী বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তার ওপর দলে থেকে একই মঞ্চে বসে দিনের পর দিন বাবার নামে দলের অন্য নেতাদের গালমন্দ সহ্য করাও তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তৃণমূল নেতৃত্ব যাতে সাসপেন্ড করে সেজন্যই বিজেপির সামগ্রিক ফল দেখে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উল্লেখ্য, মুকুল রায়ও এদিন ছেলের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি উদাহরণ টেনেছেন উত্তরপ্রদেশের মুলায়ম ও অখিলেশের সম্পর্ক নিয়ে। সেখানে বাবাকে দল থেকে বের করে দেওয়ায় কি হাল হয়েছে, সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুকুল। তাহলে কি একেবারেই এই সন্ধিক্ষণের অপেক্ষা করছিল ঘটকরোডের রায়বাড়ি? প্রশ্ন উঠছে। লোকসভা নির্বাচনের পর মুকুলের বাড়ি থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহ কত দূর গড়ায় সেদিকেই নজর থাকবে বাংলার রাজনীতির। এরপর কে বিদ্রোহ করেন, সেটাই দেখার। এনইউ / ২৪ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2W7pTEd
May 24, 2019 at 08:17PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন