ঢাকা, ০৯ মে- নন্দিত রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বিশ্বকবির গানের অনিন্দ্য পরিবেশনা দিয়ে তিনি জয় করেছেন অগণিত সঙ্গীতপ্রেমীর হৃদয়। কবিগুরুর গানের বাইরেও অ্যালবাম ও চলচ্চিত্রে বেশকিছু ভিন্ন ধর্মী আয়োজনে গেয়েছেন তিনি। এবার প্রকাশ করলেন তার গাওয়া কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ এবং রজনীকান্ত সেনের গানের সংকলন তিন কবির গান। তিন কবির গান নিয়ে অ্যালবাম করার ভাবনা কীভাবে এলো? কিছু গান চিরকালের। লোকগানের আবেদন যেমন হাজার বছরেও এতটুকু ম্লান হয়নি, তেমনি পঞ্চকবির অসংখ্য গান যুগ যুগ ধরে শ্রোতার হৃদয় আন্দোলিত করে আসছে। আমি এবং অনেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে যাচ্ছি নিয়মিত। নজরুলসঙ্গীতের চর্চাও কোনো অংশে কম হচ্ছে না। কিন্তু অতুল প্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন এই তিন কবির গান নিয়ে নতুনদের আয়োজন সেভাবে চোখে পড়ছে না। তিন কবির গানের প্রতি ভালো লাগা থাকলেও আমারও সেভাবে কিছু করা হয়ে ওঠেনি। লোকগান নিয়ে যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখনই ভাবনাটা মাথায় এসেছিল; ঠিক করেছিলাম সময় সুযোগ হলে তিন কবির গানের একটি সংকলন প্রকাশ করব। এর পর একটু সময় নিয়ে কাজটি করেছি। নতুন অ্যালবামটির সঙ্গে তো আপনার দুই শিষ্যের গানের অ্যালবামও প্রকাশ পেল। গুরু হিসেবে নিশ্চয় ভালো লাগা কাজ করছে ... অবশ্যই, যে কোনো সৃষ্টিশীল মানুষ তার সৃষ্টির মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে যান। গুরুও তার শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে তৈরির চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা যখন ভালো গান গায়, সাফল্য পায়, লোকের প্রশংসা আদায় করে, তখন বিষয়টা অসম্ভব আনন্দের হয়। আমার নতুন অ্যালবামের সঙ্গে আঁখি হালদার ও স্বাতী সরকারের গানের সিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ওরা দুজনই খুব ভালো গেয়েছে। আশা করছি শ্রোতারাও গানগুলো ভীষণ পছন্দ করবে। এই প্রাপ্তির জায়গাটা অন্য রকম। গতকাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মজয়ন্তী পালিত হলো। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও রবিঠাকুরের গান কেন সমকালীন... রবিঠাকুর তার সৃষ্টির মাধ্যমে ভেতরের মানুষকে চিনিয়েছেন। এ জন্য আমরা যখন তার গল্প-উপন্যাস পড়ি, গান শুনি, নাটক দেখি, তখন মানুষের প্রকৃত অবয়বটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শতবর্ষ আগে দূরদৃষ্টি দিয়ে এ সময়ের চিত্রকে কবিগুরু তার সৃষ্টিকর্মের মাঝে তুলে ধরেছিলেন। সেই সময় তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এখনকার সমাজ পরিবর্তনকে। সে কারণেই বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ শুধু এখন কেন; সমকালীন থাকবেন হাজার বছর। অনেকে বলেন, রবীন্দ্র-গানে আত্মার সন্ধান মেলে ... ঠিক তাই। রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার পথের দিশারি। প্রতিদিনের জীবনযাপনে আমাকে সাহস জোগায় রবীন্দ্রসঙ্গীত। যখনই কোনো সংকটে পড়ি, গানের মধ্যে নতুন করে শুরু করার প্রেরণা খুঁজে পাই। জীবনের কোনো মুহূর্তে কী করতে হবে- রবীন্দ্রনাথের গানে সব উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। নতুনদের রবীন্দ্রচর্চা কতটা আশাব্যঞ্জক? রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখা ও রবীন্দ্রনাথকে জানার বিষয়ে তরুণদের আগ্রহের কমতি নেই। ভালো শিক্ষক পেলে তারা আগ্রহ ও নিষ্ঠার সঙ্গে রবীন্দ্রচর্চা করে থাকেন। সম্ভাবনা অনেক আছে। আমরা আশাবাদী, আগামীতে রবীন্দ্রনাথকে বোঝেন, জানেন ও চর্চা করেন এমন অনেক শিল্পী পাব আমরা। গানের স্কুল সুরের ধারা প্রতিষ্ঠার পেছনে আপনার ভাবনার কথা জানতে চাই ... শুরুর দিকে একটা গানের স্কুল করার পরিকল্পনা ছিল। তবে দীর্ঘ এত বছর পথচলার পথে আমার ভাবনার বেশকিছু পরিবর্তন এলো। ভেবেছি শুধু গান শেখানোই যথেষ্ট নয়, বরং তার আগে মনুষ্যত্ববোধ যেন বিকশিত হয় সেদিকটাও দেখতে হবে। সেটা করতে গিয়ে বাচ্চাদের শান্তিনিকেতনের আদলে তাদের যে সৃজনশীলতা তাতেই জোর দিতে চেয়েছি। শুধু গানের মধ্যে কাউকে বৃত্তবন্ধি করে রাখতে চাই না। তাই এ স্কুলে নাচ, আবৃত্তি, ছবি আঁকা সব শেখানো হয়। তা ছাড়া আমরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য মিউজিক ফর ডেভেলপমেন্ট নামে একটি অনুষ্ঠান করি। সুরের ধারাই অন্তর্ভুক্ত একটি প্রকল্প হিসেবে এটি শুরু করেছিলাম। এ বছর গান শেখানোর এই আয়োজনের ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে। অনেক তরুণ শিল্পী বর্তমানে ভিন্ন আঙ্গিকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। সাম্প্রতিক বেশ কয়েক বছর ধরেই বিষয়টি নিয়ে প্রাজ্ঞ অনেক শিল্পীর মধ্যে বিভিন্ন রকম যুক্তিতর্ক হয়েছে। আপনি কীভাবে দেখছেন? এ নিয়ে আমি দোষের তেমন একটা কিছু দেখি না। এর আগেই বলেছি, রবীন্দ্রনাথ সবসময় সমকালীন। কারণ তার প্রতিটি চিন্তাভাবনার মধ্যে নতুন করে দেখার প্রয়াস ছিল। তিনি নিজেও যথেষ্ট উদারমনা ছিলেন। তাছাড়া শান্তিনিকেতনের আসল ব্যাপারটাই ছিল উদ্ভাবন, আবাহন আর যে কোনো নতুন প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করা। এ বিষয়টি যদি মানা হয়, তাহলে বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে তরুণ প্রজন্ম যে নতুন আঙ্গিকে রবীন্দ্র-গান গাইছে, তা নিশ্চয় নতুন কোনো ভাবনা থেকেই গাইছে। এ চর্চাটা দোষের কিছু না। আমরাও যখন ছোট ছিলাম, আমাদের তরুণ বয়সে নিজেদের মতো করেই ভাবতাম। এখনকার প্রজন্মও তাদের নিজেদের মতো করে গাইছে। হয়তো আগামী ১০০ বছর পরের প্রজন্ম আবার অন্যভাবে গাইবে। আসলে প্রতিটি জেনারেশনের ভাবনা আলাদা হয়। তাই তো মানুষকে সময়ের সঙ্গে চলতে হয়। এমএ/ ০৯:৪৪/ ০৯ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2H8gdzU
May 10, 2019 at 03:57AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top