লন্ডন, ২৯ নভেম্বর- ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যারো ওয়েস্ট আসন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লড়ছেন সাবেক কাউন্সিলর ডা. আনোয়ারা আলী। সবশেষ নির্বাচনে একই দল থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস-এর প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। আনোয়ারার আদি নিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। তার আসনে বাংলাদেশি ভোটার কম হলেও গুজরাটের বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ভোটার রয়েছে সেখানে। আসনটি লেবার ও কো-অপারেটিভ পার্টির দখলে থাকলেও এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। নিজস্ব রাজনৈতিক সমীকরণে এবার ব্রিটিশ ভারতীয়দের কনজারভেটিভ পার্টিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বিবেচনায় সেখানকার ভারতীয় ভোটাররা আনোয়ারাকেই বেছে নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান লেবার ও কো-অপারেটিভ পার্টির এমপি রিচার্ড থমাসও ব্রিটিশ ভারতীয়দের ভোট নিতে মরিয়া। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আনোয়ারা এবং তার সমর্থকরা। আনোয়ারা আলী পেশায় একজন চিকিৎসক। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে চিকিৎসার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতির মাঠে রয়েছেন। সাড়ে চার বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে লন্ডনে আসেন আনোয়ারা। তার বেড়ে ওঠা ও শিক্ষাজীবন কেটেছে লন্ডনেই। হাজী জোবেদ আলীর তিন সন্তানের মধ্যে সবাব ছোট আনোয়ারা একজন ব্যবসায়ীও। তিনি সাংবাদিক রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরীর স্ত্রী ও এক পুত্র সন্তানের জননী। চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে ব্রিটিশ সরকারের এমবিই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচনেও সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্রিটিশ বাংলাদেশি লড়ছেন লেবার পার্টি থেকে। বর্তমান তিন এমপি রোশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক ও রূপা হক। সিলেটের রাবিনা খান আর মৌলভীবাজারের বাবলিন মল্লিক লড়ছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে। ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এবার এমপির টিকিট পাওয়া একমাত্র ব্রিটিশ বাংলাদেশি হলেন আনোয়ারা। এই ছয় প্রার্থীর মধ্যে বয়স ও ভোটের রাজনীতিতে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আনোয়ারা আলী। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে গিয়ে দম ফেলার ফুসরত নেই আনোয়ারার। তিনি বলেছেন, শনি ও রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে সারাবেলা আর অন্য দিনগুলো কাজ শেষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আনোয়ারা জানান, ৪৫ বছর ধরে তিনি লন্ডনে বসবাস করছেন। সেখানে দুটি আন্তর্জাতিক কোম্পানির মূল কার্যালয়ে কাজ করেছেন। তিনি ব্রিটেনের দুটি পাবলিক বডির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, যারা বছরে তিন মিলিয়ন পাউন্ডের সরকারি অর্থ ব্রিটিশ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করে। আনোয়ারা বর্তমানে যে দুটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন সেগুলো লন্ডনের পঞ্চাশ হাজার বাসিন্দার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরাসরি কাজ করছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আনোয়ারা। বলেন, ছাত্র অবস্থায় ব্রিটেনের রাজনীতির মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। দুই দশক আগে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাচিত কাউন্সিলর হিসেবে ভোটের রাজনীতিতে নাম লেখাই। লন্ডনের যে আসনে আনোয়ারা এবার কনজারভেটিভ পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন, সেই হ্যারো ওয়েস্টে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার ও কো- অপারেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত বর্তমান এমপি গারথ রিচার্ড থমাস। এই দুই মূল প্রতিদ্বন্দ্বীর পাশাপাশি এখানে ব্রেক্সিট পার্টির রিচার্ডে জোনস, লিবারেল ডেমোক্র্যাটের লিসা মারিয়া ও গ্রিন পার্টির রোয়ান ল্যাংলে প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। ভারতীয়, বিশেষত গুজরাটের বিপুল সংখ্যক ভোটার বসবাস করেন হ্যারো ওয়েস্টে। এই আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা থাকে ব্রিটিশ ভারতীয় ভোটারদের। সে কারণে এখানে আনোয়ারা ও থমাস দুই জনের টার্গেটই ওই ভোটাররা। এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবস্থান কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে। ব্রিটিশ ভারতীয়রা তার আহ্বানে সাড়া দিলে আনোয়ারা সুবিধা পাবেন। বর্তমান লেবার ও কো-অপারেটিভ পার্টির এমপি গারথ রিচার্ড থমাসও ভারতীয় ভোটে ভাগ বসাতে মরিয়া। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা চার দফায় এই আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন সাবেক এ স্কুলশিক্ষক। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনি লেবার ফ্রেন্ডস অব ইন্ডিয়ার চেয়ার। ঈদ ও দীপাবলির দিনে ব্রিটেনে সরকারি ছুটি ঘোষণা, জিসিএসই, ও, এ লেভেল পরীক্ষায় গুজরাটি ভাষা অন্তর্ভুক্তির দাবিতে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। হ্যারো ওয়েস্টের বাসিন্দা ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক কাউন্সিলর এম মাঞ্জিকারা বলেন, এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের নির্বাচন হচ্ছে, তাই আনোয়ারার জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ, এই প্রার্থী তার আসনে অর্থবহ, পরিকল্পিত, সমন্বিত ও ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে ডা. আনোয়ারা সোমবার বলেন, এখানে যিনি ২০ বছর ধরে এমপি রয়েছেন তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশূন্য সাংসদ। দীর্ঘদিন এমপি থেকেও তিনি এ এলাকার মানুষের জন্য অর্থবহ কোনও সমন্বিত ইতিবাচক পরিবর্তনে সক্ষম হননি। আমাকে যদি এখানকার ভোটাররা ভোট দিয়ে পার্লামেন্টে পাঠান তবে আমি আক্ষরিক অর্থেই হ্যারো ওয়েস্টের মানুষের জন্য কাজ করবো। এন কে / ২৯ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2rGqzSd
November 29, 2019 at 03:00PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন