ঢাকা, ১৩ নভেম্বর - আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে কজন মানুষ সর্বক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন, শিল্পচর্চা অন্তপ্রাণ যাদের, তাদের মধ্যে একজন এই মানুষটি। একাধারে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন, রয়েছেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ পদে, আবার সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের (সিএটি) সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গহীন বালুচর চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য সম্প্রতি ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭-তে মনোনীত হলেন শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে। একদিকে যেমন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, তেমনি আবার অন্যদিকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। মঞ্চ নাটক স্তালিন-এর নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। সেই নাটক নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। এসব নিয়েই একটি ছোট্ট আড্ডা তার সঙ্গে, দেশেবিদেশের পাঠকদের জন্য। অভিনেতা হিসেবে যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, এটিকে আমি একটি নাটক ছাড়া কোনো কিছুই ভাবছি না। একটি নাটকের মধ্যে অনেক চরিত্র থাকে। সেই চরিত্রগুলো কখনো কখনো আমরা অভিনেতারা কাল্পনিক হিসেবে, আবার কখনো কখনো ইতিহাসের কোনো সত্য ঘটনা বা ব্যক্তিকে ধারণ করি। স্তালিন নাটকে আমার যে মূল চরিত্র, যেটা নাম ভূমিকায়, সেটা ইতিহাসের একটি শক্তিশালী ব্যক্তিকে নিয়ে। আমি যখন নাটকটি পড়ি এবং আমাকে এ চরিত্রে কাস্টিং করা হয়, তখন শুধু নাটকটিতে অভিনয় করব এই বোধ থেকেই কাজ শুরু করি। রিহার্সেলে যাই, তখন আমাদের নির্দেশক কামালুদ্দিন নীলু স্তালিন সম্পর্কে আমাকে বেশ কিছু স্টাডি করালেন। বই পড়ালেন, বিভিন্ন রেফারেন্স পড়ালেন। পাশাপাশি উনি স্তালিনকে কিভাবে ভাবছেন বা দেখছেন, সে বিষয়েও আমাকে ধারণা দেন। তিনি যেভাবে স্তালিনকে দেখতে চাইছেন, আমি একজন অভিনেতা হিসেবে সেটা পুরোপুরিভাবে করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার দক্ষতা, আমার চেষ্টাটা আমি চালিয়ে গেছি। আমি তার মতো করে, তার চাওয়াটাকেই পূরণ করেছি। উনি (নির্দেশক কামালুদ্দিন নীলু) আমার কাজটা ভীষণ পছন্দ করলেন। বলতে পারি যে, একটা চরিত্র হিসাবে এই কাজটা করে আমি অনেক তৃপ্ত, আনন্দিত। স্তালিন নাটকটি মঞ্চে আসতেই শুরু হলো নাটকের ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা। ব্যাখ্যাটা সত্য না মিথ্যা, এসব নিয়ে একটি শ্রেণি উঠেপড়ে লাগল। কিন্তু আমি মনে করি, এটুকু মাথায় রাখে উচিত কামালুদ্দিন নীলু যখন কোনো কাজ করেন, সেটা যে দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে উনি করেন, এটা বাংলাদেশের মানুষ, তথা পৃথিবীর নাট্যবোদ্ধারা অনেকেই জানেন। যথেষ্ট পরিমাণে না জেনে এরকম একটি চরিত্র নিয়ে কাজ করার মতো মানুষ তিনি নন। তো যতই আলোচনা-সমালোচনা হোক না কেন, ওসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথাই নেই। কারণ ব্যক্তিগতভাবে স্তালিন মানুষটি সত্যি এমন ছিলেন কি না, কিংবা তিনি সত্যিকার অর্থে কেমন ছিলেন এ নিয়ে ব্যক্তি শাহাদাৎ বা অভিনেতা শাহাদাৎ হিসাবে আমার কিছু যায় আসে না। মঞ্চে একটি চরিত্র হিসেবে আমার ডিরেক্টর যেভাবে চেয়েছেন, আমি সেভাবেই কাজ করে গেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় সবগুলো শোই হাউজফুল যাচ্ছে। আপনারা জানেন নিশ্চয়, দ্বিতীয় শোয়ের দিন নাটক শুরুর আগে কিছু লোক মিছিল করে চেষ্টা করছিল শো বন্ধ করার। কিন্তু দর্শকরাই তাদেরকে সরিয়ে দেয়। কারণ দর্শকদের টিকেট কাটতে সমস্যা হচ্ছিল। মহিলা সমিতিতে প্রতিমাসে না হলেও একমাস পর পর দুটো করে শো করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। অন্য হলগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। জানি না কবে এর সমাধান হবে। তবে যখনই শো থাকবে, পর পর দুটো শো থাকবে। আমি মঞ্চে পেশাদার অভিনেতা হিসাবে কাজ শুরু করি ১৯৯৮ সালে। সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারে, একজন পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা হিসেবে। এর আগের থিয়েটারে কাজ করাটা তেমনভাবে উল্লেখযোগ্য না। সেটা ছিল একেবারেই সৌখিনভাবে। অভিনয় বা মঞ্চের প্রতি দুর্বলতা ছোটবেলায় ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই। তখন থেকেই নিয়মিত স্কুলের সব নাটকের সম্পৃক্ততা ছিল। টিভিতে কাজ করাটা আমার কাছে অনেক বেশি উপভোগ্য। ২০০৭-এ সিসিমপুর সিরিজে বাহাদুর নামে একটা চরিত্রে কাজ করি, যেটা দিয়েই টিভি মিডিয়ায় আমার যাত্রা শুরু। সিসিমপুরে কাজ করার পাশাপাশি আরও কয়েকটা টিভি নাটকে অভিনয় করতে থাকি। ভীষণ খুশী আমি। আমার জীবনে প্রথম কোনো জাতীয় পুরস্কার। বলা যায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, সর্বোচ্চ সম্মান। আমার মধ্যে বিশেষ এক ভালো লাগা অনুভব করছি। কারণ গহীন বালুচর সিনেমাটিতে যে চরিত্রটির জন্য আমি পুরস্কারটা পাচ্ছি, সেই চরিত্রটিতে সত্যিই আমি হৃদয় দিয়ে কাজ করেছিলাম। অনেক ভালো অভিনয় করেছি আমি। এ পর্যন্ত অনেকগুলো চরিত্রে আমি কাজ করেছি। সবগুলোই যে আমার ভালো লেগেছে, তা নয়। কিন্তু গহীন বালুচরের এই চরিত্রটিতে অভিনয় করার পর যখন পর্দায় দেখলাম, আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমার মনে হয়েছে, আমি চরিত্রটিকে সত্যিকারেই তুলে ধরতে পেরেছি। আর যখন এটাতেই সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলাম, আমি আনন্দিত, সত্যিই ভীষণ আনন্দিত। এন এইচ, ১৩ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36ZfTyr
November 13, 2019 at 08:42AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top