ঢাকা, ১৩ নভেম্বর- আমার প্রত্যেক কাজেই স্যারের কথা খুব মনে পড়ে। কারণ জীবনের মূল সময়টা, যে ২০ বছর সেই বয়সটা স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। তখনকার যে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা এবং পরিশ্রম করার শক্তি এই সবকিছুই ওই সময় স্যারের সঙ্গে ভাগ করেছি। যখন খেতে যাই তখনও স্যারের কথা মনে পড়ে। এই পরশুদিন একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলাম। কথায় কথায় কথা উঠলো, কার কোনটা প্রিয় খাবার? তখনও স্যারের কথাটি মনে পড়ে গেল। আমি বললাম, আমার প্রিয় খাবার চ্যাপা শুটকি। আমার দেশের বাড়ি গাইবঅন্ধা। ওখানে কিন্তু চ্যাপা শুটকির ভর্তা কেউ খায় না। এটা স্যারের বাড়ির দিকের খাবার, ময়মনসিংহের। ২০ বছর স্যারের কাছাকাছি থাকার পর এখন আমারও প্রিয় খাবার চ্যাপা শুটকি। স্যার চ্যাপা শুটকির ভর্তা খুব পছন্দ করতেন। আমারও সেই অভ্যাস হয়ে গেছে। স্যারের যে খাবারগুলো প্রিয় ছিল আমাদেরও ওই খাবারগুলো প্রিয় হয়ে গেছে। স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম দেখাটি ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্মৃতি এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, তখন ছিল ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজ্যুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর)। নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করলাম। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট দিতো। আমি সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ডিপার্টমেন্টে গেলাম। সার্টিফিকেট উঠাতে হেড অব ডিপার্টমেন্টের স্বাক্ষর লাগে। তখন আমাদের হেড অব ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসার করিম স্যার। তিনি ছিলেন হুমায়ূন স্যারের স্কুলের বন্ধু। বগুড়া জেলা স্কুলে তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। স্বাক্ষর নিতে গেলাম আমি স্যারের অফিসে। করিম স্যারের পিয়ন বললো, স্যার তো হুমায়ূন আহমেদের অফিসে গেছে। হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে দেখা করার এই একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। আমার স্যারের সঙ্গে দেখা করার ছুঁতো নিয়ে আমি গেলাম হুমায়ূন স্যারের অফিসে। গিয়ে দেখি হুমায়ূন আহমেদ ও আমার স্যার বসে আছেন। আমি স্যারকে গিয়ে বলি, একটা স্বাক্ষর লাগবে। পাশেই বসা ছিল হুমায়ূন আহমেদ। এরপর হুমায়ূন আহমেদ জানতে চাইলেন, আমি কোথায় থাকি? নাম কি? স্যারকে বললাম, আমি গাজীপুরে থাকি। হুমায়ূন স্যার বললো, আমি তো প্রায়ই ওখানে শুটিং করতে যাই। মাঝে-মধ্যে ছোটখাট অনেক সমস্যাও হয়। একটু সময় দিয়ো তো। স্যারের এই কথা শুনে আমি তো রীতিমত খুশিতে আত্মহারা। কিসের সার্টিফিকেট আর কিসের স্বাক্ষর। আমার মনে আছে, সেই সার্টিফিকেট আমি দুবছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছি। তখন তো মোবাইল ছিল না। আমি যে ফার্মেসিতে বসতাম সেখানে তিনদিন পর স্যার ফোন করেন। তখন সবুজ সাথীর শুটিং শুরু হবে। ফার্মেসির ছেলেটা এসে আমাকে বললো, আপনাকে হুমায়ূন আহমেদ ফোন করছে। সে তো আর জানে না হুমায়ূন আহমেদ কে? তাকে এক ধমক দিয়ে দৌঁড়ে এসে ফোনটি ধরলাম। ফোন কানে নিতেই স্যার বলছে, ডাক্তার সাহেব, আমরা শুটিং করতে গাজীপুরে যাবো। আপনি চলে আসেন। অনেক কিছু আয়োজন করতে হবে। ওই ফোন রেখে পরের দিন সকাল বেলা একদম গাজীপুর। রাতে আর ঘুম হয়নি। সেই থেকে স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু। প্রথম দিকে স্যার আমাকে ডাক্তার সাহেব, পরে ডাক্তার বলে ডাকতেন। স্যারের ডাকের মধ্যেও একটা আদর ছিল। শুরুতে আপনি বলে সম্বোধন করলেও পরে তিনি আমাকে তুমি বলে ডাকা শুরু করেন। এই মানুষটির কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আর/০৮:১৪/১৩ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2CFOzHs
November 13, 2019 at 04:16AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top