ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর - ঢাকাই সিনেমার নন্দিত নায়িকা শাবনূর তার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে প্রায় দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এসব সিনেমার মধ্যে ব্যবসা সফল সিনেমার তালিকাটা বেশ লম্বা। তার অভিনীত কিছু কিছু সিনেমা এতটাই দর্শক প্রিয় হয়েছিলো যে দীর্ঘদিন অভিনয়ে না থেকেই সবার কাছে প্রিয় হয়ে আছেন তিনি। সেই সব ছবির মধ্যে থেকে শাবনূর অভিনীত ১০ সিনেমা নিয়ে এই আয়োজন। শাবনূরের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের সেরা ছবির কথা বলতে গেলেই প্রথমেই আসবেন তোমাকে চাই ছবিটির নাম। তোমাকে চাই (১৯৯৪) এটি মূলত সালমান শাহের চলচ্চিত্র। স্টাইলিশ সালমানকে দেখতে এ ছবি কোনো তুলনা নেই। অন্যদিকে শাবনূরকে দেখতে হবে কী করে তিনি পরিণত হচ্ছেন। ধনী-গরীব প্রেমের চলচ্চিত্রটিতে দারুণ কিছু আবেগী মুহূর্ত রয়েছে। এ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে বিখ্যাত ভাল আছি ভাল থেকো গানটি। গানটির অসাধারণ দৃশ্যায়নে সবাইকে চমকে দিয়েছেন পরিচালক মতিন রহমান। স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) : সালমান শাহ-শাবনূর জুটির অন্যতম সফল চলচ্চিত্র এটি। এম এ খালেক অতি প্রচলিত ধনী-গরীব ফর্মূলায় ছবিটি নির্মাণ করেন। কিন্তু টানটান চিত্রনাট্য, সফল কিছু গান ও অভিনয়ের কারণে ছবিটি পেয়েছিলো দারুণ জনপ্রিয়তা। এ ছাড়া এখানে দেখা দিয়েছিলেন দুর্দান্ত অভিনয়ের পরিণত শাবনূর। বিয়ের ফুল (১৯৯৮) : মতিন রহমান পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি মুম্বাইয়ের দিওয়ানার অফিসিয়াল রিমেক। শাবনূরের অভিনয় ও গানই এ ছবির প্রাণ। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল হিন্দি ছবির গানগুলো না রেখে নতুন কিছু সুর তৈরি করেছেন। এর মধ্যে তোমায় দেখলে মনে হয় গানটি এখনো জনপ্রিয়। শাবনূরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও শাকিল খান। নারীর মন (১৯৯৯) : বিয়ের ফুল ছবির অভাবনীয় সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মতিন রহমান পরের বছরই নির্মাণ করেন নারীর মন ছবি। এটিও বলিউডের একটি ছবির কপিরাইট নিয়ে তৈরি করা। এই ছবিতেও শাবনূরের নায়ক হিসেবে পর্দায় আসেন রিয়াজ ও শাকিল খান। একজন নারীর মন পেতে দুই বন্ধুর সাধনা করে যাবার গল্প নিয়েই এই ছবি। ছবিটি একদিকে যেমন ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিলো তেমনি অন্যদিকে জনপ্রিয়তার আঁকাশ ছুঁয়েছিলেন শাবনূর। তার সাবলীল অভিনয় দিয়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির তুরুপের তাসে। শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ (২০০১) : কমেডি, রোমান্টিক ঘরানার এই ছবিটি শাবনূরকে দিয়েছিলো অন্যরকম জনপ্রিয়তা। এর পরিচালক ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। রিয়াজের বিপরীতে শাবনূরের এই ছবিটি দারুণ ব্যবসা সফল হয়েছিলো। ছবির গল্পে দেখা যায় মিসেস দিলরুবা চৌধুরী ব্যবসায় টাকা খাটিয়ে আলিশান বাড়ী ও চৌধুরী এন্ড কোম্পনী নামে বিরাট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। স্বভাবে তিনি রাগী, বদমেজাজী। অফিস ও বাড়িতে নিজের মনগড়া নিয়মে সবাইকে চলতে বাধ্য করেন। তার স্বামী আরমান চৌধুরী বিশিষ্ট ভদ্রলোক। কলিজার জোর কম থাকায় স্ত্রীর ইচ্ছে মত তাকে চলতে হয়। বড় মেয়ে প্রেমা চৌধুরী ( শাবনূর) স্বভাবে নম্র ভদ্র, অনেকটা বাবার মত। মিসেস দিলরুবা চৌধুরীর বিজনেস পার্টনার মি. মজুমদার এর প্রচুর অর্থ থাকায় তার আধপাগল একমাত্র ছেলে ইমনের সাথে প্রেমার বিয়ে ঠিক করে। প্রতিবাদ করতে না পেরে আরমান চৌধুরী প্রেমাকে পলাশপুরে বন্ধু রাজিব খন্দকার এর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। রাজিব খন্দকার নিঃসন্তান থাকায় মটর মেকানিক বাঁধন চরিত্রের রিয়াজকে ছোটবলা থেকেই সন্তান স্নেহে বড় করেছেন। একসময় বাঁধন ও প্রেমা দুজন দুজনার কাছে চলে আসে। আরমান চৌধুরী ওদের ভালবাসা পরখ করে তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু দিলরুবা চৌধুরী এ বিয়েটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তা নিয়েই হাস্যরসে ছবিটির গল্প। সুন্দরী বধূ (২০০২) : জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বৈকুণ্ঠের উইল উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেন। ছবিটিতে চিরায়ত বাঙালি বধূর চরিত্রে হাজির হন শাবনূর। রোমান্টিক নায়িকাকে স্বামী-সংসার দরদী আদর্শ গৃহবধু রূপে পেয়ে দর্শক হলে গিয়েছিলো মনের আনন্দে। ছবিতে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন নায়ক রিয়াজ। মোল্লা বাড়ির বউ (২০০৫) : এটিএম শামসুজ্জামানের গল্পে নির্মিত একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। মোল্লা বাড়ির বউ নির্মাণ করেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু। রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর ও মৌসুমী। শাবনূরের সহজাত কমিক সবাইকে হাসায়। বিশেষ করে মৌসুমীর বিষাদের বিপরীতে এটি ছিল স্বস্তির জায়গা। কিন্তু পরিণতিতে সবার মন আর্দ্র করে দেন শাবনূর। দুই নয়নের আলো (২০০৬) : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন তিন তিনজন নায়ক। ফেরদৌস, শাকিল খান ও রিয়াজ। কিন্তু শাবনূরের দাপটে কারও কিছু করারই ছিল না। অবশ্য কাহিনিও কাহিনিনির্ভর। নিম্নবিত্ত একটি মেয়ের জীবন-সংগ্রাম ও মর্যাদার লড়াই নিয়ে দুই নয়নের আলোর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। শাবনূর ভালোভাবে উৎরে গেছেন। এই ছবিটি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন শাবনূর। ফুল নেব না অশ্রু নেব (২০০২) : এফ আই মানিক পরিচালিত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি এটি। এখানে শাবনূরের দুই নায়ক। একজন তৎকালীন জনপ্রিয় নায়ক আমিন খান, অন্যজন হলেন সেই সময়ের উঠতি নায়ক শাকিব খান। ছবিতে দুই নায়কের সঙ্গে প্রেম ও সম্পর্কের দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দারুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শাবনূর। এই ছবিতে রয়েছে দুটি খুব জনপ্রিয় গান। একটি হলো দুধে আলতা বদন তোমার। এই গানে শাকিব ও শাবনূরের রোমান্স ছুঁয়ে গিয়েছিলো দর্শকের মন। অন্যটি বিধি তুমি বলে দাও আমি কার শিরোনামে। এই গানটিই মূলত ছবিটির টাইটেল ট্র্যাক। এখানে অংশ নেন শাবনূর, আমিন খান ও শাকিব। নিরন্তর (২০০৬) : অনেক রুচিশীল দর্শক আফসোস করেন শাবনূর তার ক্যারিয়ারে খুব বেশি সাহিত্যধর্মী বা ক্লাসিক ছবিতে অভিনয় করেননি বলে। শাবনূর যে প্রস্তাব পাননি ব্যাপারটি তা নয়। দেশের অনেক প্রতিথযশা নির্মাতাই শাবনূরকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে চেয়েছেন। কিন্তু মূল ধারার চলচ্চিত্রে শাবনূরের আকাশচুম্বী ব্যস্ততার ফাঁকে নিজেকে তিনি ভিন্ন ভাবনার ছবিগুলোতে সম্পৃক্ত করতে পারেননি। তারপরও তিনি অভিনয় করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর ছবিতে। সেখানে তার অভিনয় প্রশংসিত ছিলো। তবে শাবনূরের নিজের পছন্দের একটি চলচ্চিত্র নিরন্তর। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস জনম জনম অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করেছেন আবু সাইয়ীদ। ছবির গল্পে দেখা যায় বাবার অন্ধত্বের কারণে তিথিদের (শাবনূর) পরিবারে আকস্মিক দুর্যোগ নেমে আসে। কোনো চাকরি যোগাড় করতে না পেরে তিথি অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। এই ছবিতেও শাবনূরকে চিনতে ভুল হয় না। এন এইচ, ১৭ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2PrA8hy
December 17, 2019 at 08:06AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন