ঢাকা, ২৪ ফেব্রুয়ারি - ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের আয়োজক-ব্যবস্থাপক, ক্রিকেট কমিটি অফ ঢাকা মেট্রোপলিটন সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী এনামের ঘোষণা, এবারের লিগে থাকছে না কোনো বিদেশি ক্রিকেটার। অর্থাৎ, ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট লিগের ২০২০ সালের আসর হবে বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া। আজ রোববার পড়ন্ত বিকেলে শেরে বাংলার কনফারেরন্স হলে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ ঘোষণা দিয়েছেন সিসিডিএম চেয়ারম্যান। তার এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বদলে গেল একটি অধ্যায়। এতকাল ঢাকার প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি ক্রিকেটারের অংশগ্রহণ ছিল নিয়মিত। দলবদলের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা আর নতুনত্ব এসেছে, খোলামেলা দলবদল বাদ দিয়ে কখনো কখনো প্লেয়ার্স বাই চয়েজে দলবদল হয়েছে। এই তো গত দুই বছরও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দলবদল হয়েছে প্লেয়ার্স বাই চয়েজে। এবার সেই ধারা পাল্টে আবার বদল হবে খোলামেলা। অর্থাৎ দলবদল ফিরে যাচ্ছে আগের নিয়ম ও রীতিতে। কিন্তু বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া প্রিমিয়ার লিগ, হয়েছে শেষ কবে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তা হলো, ঢাকার সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগে এই প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার বন্ধ করা হলো। সেই ৮০ র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রিমিয়ার লিগ চালুর পর থেকেই বিদেশি ক্রিকেটার আর ঢাকা লিগ ছিল প্রায় সমার্থক। প্রিমিয়ার লিগে কোন সময়ই বিদেশি ক্রিকেটার নিষিদ্ধ ছিল না। তবে স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে শুরু হওয়া সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগের প্রথম কয়েক বছর সম্ভবত তিন থেকে চার বছর সে অর্থে কোন কোন দলেই বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো হয়নি। এ মুহূর্তে দেশের অন্যতম সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক জানালেন, ১৯৭৫-১৯৭৬ মৌমুমে তখনকার সিনিয়র ডিভিশনের প্রতিষ্ঠিত দল ন্যাশনাল স্পোর্টিংয়ের হয়ে দুজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ঢাকা লিগে কয়েকটি ম্যাচ খেলে গেছেন। মঞ্জুরুল হক আরও জানান, ৭০দশকের মাঝামাঝি ন্যাশনাল স্পোর্টিংয়ের পক্ষে খেলেছেন সে সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি উইলি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশে প্রথম কোনো বিদেশি ক্রিকেটার। এরপর আরেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হফসও নাকি ১৯৭৬ সালে ঢাকা সিনিয়র ডিভিশন ক্রিকেট লিগের কয়েকটি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন। তবে যতদূর জানা গেছে, ৭০ দশকের একদম শেষভাগে ঢাকার ক্রিকেটে বিদেশি ক্রিকেটারের অংশগ্রহণ শুরু হয়। সেটা সম্ভবত ১৯৭৯ সাল। তখন ঢাকা মোহামেডান ও আবাহনীতে হাতে গোনা কজন ভারতীয় ক্রিকেটার বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের কিছু নামি ও প্রসিদ্ধ ক্রিকেটার প্রথমবারের মত ঢাকা লিগ খেলতে শুরু করেন। তারপর আর কখনো ঢাকার সিনিয়র ডিভিশন ও প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি ক্রিকেটার আনা বন্ধ হয়নি। স্মরণাতীতকালের মধ্যে এবারই প্রথম ঢাকা লিগ হতে যাচ্ছে বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে অন্তত ৪০ বছর পর এই প্রথম ঢাকা ক্লাব ক্রিকেটে থাকছেন না কোন বিদেশি ক্রিকেটার। তবে একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, ঢাকা লিগে প্রথমদিকে বিদেশি হিসেবে খেলা ক্রিকেটারদের তালিকা করতে গেলে এসে যাবে এক ঝাঁক ভারতীয়র নাম। সেই তালিকায় ভারতের সাবেক টেস্ট ওপেনার অরুন লাল আর প্রণব রায় আছেন খুব ওপরের দিকে। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে প্রথম খেলা টেস্ট ক্রিকেটারের তালিকা খুঁজতে হলে আসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হয়ে রঞ্জি ও দুলীপ ট্রফি খেলা প্রণব রায়, অরুন লাল আর অশোক মালহোত্রার নাম। যতদূর জানা, এরা তিনজনই প্রথম প্রায় নিয়মিতভাবে ঢাকা লিগ খেলেছেন। এছাড়া ৭০ ও ৮০ র দশকে পশ্চিমবঙ্গের তারকা ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত এবং তখন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দলের নিয়মিত সদস্য প্রদীপ পান্ডে, অভিক মিত্র, সাগরময় শেন শর্মা, পার্থ সেন, মিন্টু দাস, অরুপ ভট্টাচার্যরা আশির দশকের শুরু থেকেই ঢাকা লিগ খেলতে শুরু করেছেন। তারপর যত সময় গড়িয়েছে, ততই বিদেশি ক্রিকেটারের রমরমা উপস্থিতি ঘটেছে ঢাকা লিগে। আশির দশকের শুরু থেকে ঢাকা লিগে যোগ হয় নতুন মাত্রা। ১৯৮২-১৯৮৩, ১৯৮৪-১৯৮৫ মৌসুম থেকে আসতে শুরু করেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। কে খেলেননি? অরবিন্দ ডি সিলভা ছাড়া ৮০ ও ৯০ দশকে লঙ্কান ক্রিকেটের সব শীর্ষ তারকাই ঢাকা লিগে খেলেছেন। সেই তালিকায় অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়সুরিয়া, রুমেশ কালুভিথারানা, রুমেশ রত্নানায়েকে, ব্রেন্ডন কুরুপ্পু, অতুলা সামারা সেকেরা, টিএল ফার্নান্ডো, রড্রিগো, সালি আহাঙ্গামা, গ্রায়েম ল্যাব্রয়, কারনাইন, ব্রায়ান রাজা দুরাই, কীর্তি রানাসিংহে, গুরুগে, রাজকুমার, রোয়ান কালপাগে, কুমারা ধর্মসেনা, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, মারভান আতাপাত্তুসহ আছেন অগণিত লঙ্কান। এর মধ্যে অনেক নামি দামি তারকা এমনকি ১৯৯৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ড্যাশিং সনাথ জয়সুরিয়া আর পাকিস্তান তথা সর্বকালের সেরা বাঁহাতি ফাস্টবোলার ওয়াসিম আকরামও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। এর মধ্যে অর্জুনা রানাতুঙ্গা এসেছেন কয়েক দফা। প্রতিবারই খেলেছেন ঢাকা মোহামেডানের পক্ষে। লঙ্কান ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম নায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা ঢাকা লিগে প্রথমে খেলেছেন আশির দশকের শেষ দিকে। আর তারপর ৯০ দশকের শেষ ভাগে। এমনকি ১৯৯৬ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার পরও ঢাকা মোহামেডানের হয়ে খেলে গেছেন রানাতুঙ্গা। সাথে সনাথ জয়সুরিয়াও ছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানেরও অর্ধশতাধিক ক্রিকেটার এক সময় ছিলেন ঢাকা লিগের নিয়মিত মুখ। পাকিস্তানের তিন নামি টেস্ট ক্রিকেটার-সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদ আর মোহাম্মদ ইউসুফও একটা সময় ঢাকা লিগের পারফরমার ছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানের হয়ে খেলা এক ঝাঁক ক্রিকেটারের এক সময়ের নিয়মিত ঠিকানা ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। সেই তালিকা অনেক লম্বা। সেখানে সেলিম এলাহী, জহুর এলাহী, বাসিত আলী, মঞ্জুর এলাহী, ওয়াসিম হায়দার, ইকবাল সিকান্দার, শওকত মীর্জা, শাহেদ মেহবুব, শহীদ মাহমুদ, আমির হানিফ, শোয়েব মালিক, শহীদ আফ্রিদি, তৌফিক ওমর, ইমরান ফরহাতসহ অনেকেই আছেন। ওদিকে ভারতের অনেক নামি তারকাও ছিলেন ৯০ দশকের ঢাকা লিগের প্রায় অপরিহার্য সদস্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় খেলেছেন রমন লাম্বা। দিল্লীর এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান কাম মিডিয়াম পেসার ঢাকার ক্রিকেটে প্রায় সাত-আট মৌসুম খেলার পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে মাথায় বল লেগে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া সাবেক ভারতীয় নামী ক্রিকেটার- সঞ্জিব শর্মা, চেতন শর্মা, অজয় জাদেজা, প্রাভিন আমরে, আশিষ নেহরা, রাজেশ চৌহান, সুনিল জোসিও ঢাকা লিগের পরিচিত মুখ। এর বাইরে ইংল্যান্ডের নেইল ফেয়ারব্রাদার, রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের গাস লোগিও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অংশ নিয়েছেন। জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিক, আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী, রহমত শাহরাও ঢাকা লিগে খেলে যাওয়া বিদেশির তালিকায় আছেন। সেই সব নামি, পরিচিত, প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ক্রিকেটারের সরব উপিস্থিতি আর নৈপুণ্যের দ্যুতিতে দিনকে দিন জমে উঠেছে ঢাকার ক্রিকেট লিগ। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উত্তরণে ঐ সব বিদেশি ক্রিকেটারের উপস্থিতি এবং খেলা কার্যকর অবদান রেখেছে। তাদের সাথে খেলে খেলে বাংলাদেশের মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, ফারুক আহমেদ, আতাহার আলী, মাসুম শহীদ, প্রিন্স মনি, খালেদ মাহমুদ সুজন, খালেদ মাসুদ পাইলট, মোহাম্মদ রফিক, হাসিবুল ইসলাম শান্ত, সাইফুল ইসলামরা নিজেদের তিলে তিলে গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। সময়ের প্রবাহতায় সেই বিদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এক সময় তিন থেকে চারজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানো যেত, সেটা ধীরে ধীরে কমিয়ে একজনে নামিয়ে আনা হয়েছিল কয়েক বছর আগেই। কিন্তু এবার হঠাৎ কেন ও কি কারণে বিদেশি ক্রিকেটার একদম বন্ধ করে দেয়া হলো? এ প্রশ্নর জবাবে সিসিডিএম চেয়ারম্যান কাজী এনামের ব্যাখ্যা, আসলে দেশি ক্রিকেটারদের বেশি করে সুযোগ দেয়ার জন্যই বিদেশি ক্রিকেটার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ২৪ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/32lz3MS
February 24, 2020 at 02:27AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন