কলকাতা, ১৯ মার্চ - পারিবারিক একটি সমস্যা নিয়ে দিদিকে বলোতে ফোন করেছিলেন। তার জেরে পুলিশের হাতে মারধর, এমনকি যিনি ফোন করেছিলেন তাঁর পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠল। দিদিকে বলো-তে ফোন করে চরম হেনস্থার মুখোমুখি হয়ে শেষে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে ওই পরিবার। গত শনিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পিয়া দাস নামে বছর বাইশের এক তরুণী এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। আগরপাড়ার আজাদ হিন্দ নগরের বাসিন্দা পিয়া মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। তিনি তাঁর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁর বাবা রঞ্জিৎ দাস আগরপাড়া ঊষুমপুর বটটলা বাজারে ছোট একটি মাছের দোকান চালান। সেই ব্যবসার আয়েই তাঁদের সংসার এবং পিয়ার চিকিৎসা চলে। দোকানটি পিয়ার দাদুর নামে নথিভুক্ত। কিন্তু, গত ২০ বছর ধরে পুরসভাকে কর দিয়ে ওই দোকান চালাচ্ছেন রঞ্জিৎ। পিয়া জানিয়েছেন, ওই দোকান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সমস্যা চলছিল রঞ্জিতের সঙ্গে পিয়ার মামা রতন দাসের। ওই এলাকায় রতনের একটি সোনার দোকান আছে। পাশাপাশি তিনি নির্মাণ ব্যবসায়ীও। অভিযোগ, আদালত রঞ্জিতকে দোকান চালানোর নির্দেশ দিলেও গায়ের জোরে গত পাঁচ মাস ধরে ওই দোকান বন্ধ করে রেখে দিয়েছেন রতন। ফলে, রোজগার বন্ধ রঞ্জিতের। সে ব্যাপারেই সুবিচার চাইতে দিদিকে বলোতে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ফোন করেছিলেন পিয়া। তাঁর অভিযোগ, দিদিকে বলোতে ফোন করে বিপত্তি বাধে। সোমবার তিনি ফোনে বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎই মামা আমার মা অঞ্জনা দাস এবং আমাকে দোকানের বিষয়ে আলোচনার জন্য মামাবাড়িতে ডেকে পাঠায়। সেখানে গেলে আমাকে ধমকানো শুরু হয়, কেন আমি দিদিকে বলোতে ফোন করেছি। এর পরই আমার মাকে গালিগালাজ করা হয়, মারার চেষ্টা করা হয়। অভিযোগ, এর খানিক পরেই পিয়ার মামা রতন দাস ঘোলা থানার ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজকে ফোন করলে সাব ইনস্পেক্টর সিদ্ধার্থ মিশ্র-সহ বেশ কয়েক জন পুলিশ কর্মী হাজির হন। পিয়াকে দিদিকে বলো-তে ফোন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র দত্ত নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা। তিনি এ দিন বলেন, বিশ্ববন্ধু চট্টরাজের সঙ্গে রতন দাসের ব্যক্তিগত পর্যায়ের বন্ধুত্ব রয়েছে যা এলাকার সবাই জানেন। অভিযোগ, পুলিশ এসেই পিয়া এবং তাঁর মা-কে টেনে হেঁচড়ে পুলিশের ভ্যানে তোলে। পিয়া বলেন, আমি নড়়াচড়া করতে পারি না। আমাকে প্রায় চ্যাংদোলা করে ভ্যানে তোলে পুলিশ। মাকেও তোলা হয়। পিয়ার কথায়, আমাদের ঘোলা থানায় না নিয়ে গিয়ে, প্রথমে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের একটি ফাঁকা জায়গায় থামিয়ে পুলিশের ভ্যানেই মারধর করা হয়। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় ব্যারাকপুর মহিলা থানায়। সেখানে আমার অবস্থা দেখে পুলিশকর্মীরা হাজতে রাখতে রাজি হননি। আমাকে ফিরিয়ে আনা হয় ঘোলাতে। পরের দিন আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান অঞ্জনা। জামিন নিতে হয় পিয়া এবং তাঁর বাবাকেও। পিয়া বলেন, ওই দিন মামা আমাদের বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে জোর করে ঢোকা, মারধর, ভাঙচুর এবং জোর করে টাকা আদায়ের মিথ্যা অভিযোগ করেন। আর মামার বন্ধু পুলিশ অফিসার সেই মিথ্যা মামলায় আমাদের গ্রেফতার করে মারধর করে। কারণ আমরা দিদিকে বলোতে ফোন করেছিলাম। গোটা ঘটনার পর ধৃতরাষ্ট্রবাবুর প্রশ্ন, যে পরিবার রতন দাসের ভয়ে নিজেদের দোকান খুলতে পারল না, যে মেয়েটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না, তাঁরা রতন দাসের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাল, ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করল এটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? আজাদ হিন্দ নগর পানিহাটি পুরসভা এলাকার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। সেখানকার কাউন্সিলর আশিস দেবরায়। তাঁকে গোটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ দিন বলেন, দোকানের বিষয়টি নিয়ে পিয়ার পরিবার আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ওটা বাজার কমিটির আওতাভুক্ত হওয়ায় আমি কিছু করতে পারিনি। তবে পুলিশের বিষয়টি আমি ঠিক জানি না। পিয়ার মামা, রতন দাসকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কোনও কিছু বলতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, থানার বড়বাবু আমাকে এই ব্যাপারে কথা বলতে বারণ করেছেন। তার পরে তিনি দাবি করেন, পিয়ার পরিবার তাঁর বাড়িতে হামলা করেছিল। ঘোলা থানার ওই আধিকারিক বিশ্ববন্ধু চট্টরাজকে ফোন করা হলে তিনি কোনও জবাব দিতে চাননি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের মতো তদন্ত করছি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, অভিযোগ থাকলেই কি প্রায় চলচ্ছক্তিহীন তরুণীকে ওই ভাবে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়? তারও জবাব দিতে চাননি বিশ্ববন্ধু। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোটা বিষয় খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না। সুত্র : আনন্দবাজার এন এ/ ১৯ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2UhBsEN
March 19, 2020 at 09:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন