কলকাতা, ২৫ এপ্রিল- ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আরও ১ হাজার ৭৫২ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জন। শুক্রবার লকডাউন ভাঙার দায়ে কলকাতায় ২৫৪ জনকে গেপ্তার করা হয়। লকডাউন ভাঙার দায়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতজুড়ে তৃতীয় পর্যায়ে চলমান লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে থেকে বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি। শুক্রবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনাভাইরাসে আরও আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৫২ জন। আর মারা গেছে ৩৭ জন। সব মিলিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রিমত হলো ২৩ হাজার ৪৫২ জন। মৃতের সংখ্যা ৭২৩। এখনো সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে মহারাষ্ট্র। এই রাজ্যে মারা গেছে ২৮৩ জন। দ্বিতীয় স্থানে গুজরাট, মৃতের সংখ্যা ১১২। তৃতীয় স্থানে মধ্যপ্রদেশ, মৃতের সংখ্যা ৮৩। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে ৯টি জেলায় আক্রমণের কোনো খবর না মেলায় রাজ্যের চারটি হটস্পট জেলাসহ অন্যান্য জেলায় এখনো সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা রাজ্য সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলনে জানান, শেষ হওয়া গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে আরও ৫১ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে। খবর এসেছে কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে এই সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এতে এই রাজ্যে সংক্রমিত মানুষের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮৮। এর মধ্যে অবশ্য ১০৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যে মৃত মানুষের সংখ্যা আরও ৩ বেড়ে তা এখন ১৮। করোনাসহ অন্যান্য উপসর্গে মারা গেছে ৩৯ জন। মুখ্য সচিব জানান, পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই রাজ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮ হাজার ৯৩৩ জনের। তিনি আরও জানান, এখন সরকারি কোয়ারেন্টিনে রয়েছে ৫ হাজার ১৯০ জন। হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছে ২৬ হাজার ৭২৪ জন। মুখ্য সচিবের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত এই রাজ্যে লকডাউন অমান্য করায় ৩৩ হাজার ৯৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাড়ি আটক করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৬টি। গতকাল লকডাউন ভাঙার দায়ে কলকাতায় ২৫৪ জনকে গেপ্তার করা হয়। ভারতজুড়ে চলমান তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে ৩ মে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতজুড়ে করোনা শুরু হওয়ায় এই ভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৪ মার্চ প্রথমে ৩ সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেন। ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউনের মেয়াদ থাকলেও প্রধানমন্ত্রী তা বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত করেন। এবার সেই লকডাউনের মেয়াদ ফের বেড়ে ১৬ মে পর্যন্ত হতে পারে। সর্বভারতীয় একটি টিভি চ্যানেল শুক্রবার রাতে মেয়াদ বাড়ানোর এই আভাস দিয়েছে। করোনা নিয়ে রাজ্য সরকারের ১০ দফা নির্দেশিকা করোনার মৃত্যু ও সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা নিয়ে প্রকৃত তথ্য লুকানো, করোনা চিকিৎসা যথার্থ না হওয়া, করোনার নমুনা পরীক্ষা যথাযথ না হওয়া এবং রিপোর্ট বিলম্বে আসা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। বিজেপি এবং আরও কয়েকটি দল এই আপত্তি তোলে। এই আপত্তির কথা জানতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার গত সোমবার এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য দুটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠায় পশ্চিমবঙ্গে। এর একটি দল কলকাতায় আর অন্য দলটি যায় শিলিগুড়িতে। কলকাতায় এই দলের নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। যদিও এ দুটি প্রতিনিধিদলকে প্রথম পর্যায়ে এই রাজ্যে কাজ করার অনুমতি দেননি। পরে অবশ্য রাজ্য সরকার দুটি প্রতিনিধিদলকে রাজ্যের করোনায় আক্রান্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও কাজ করার অনুমতি দেয়। প্রতিনিধিদল বৃহস্পতি ও শুক্রবার কলকাতা, হাওড়া, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতাল, কোয়ারেন্টিন সেন্টার পরিদর্শন করে গতকাল বিকেলে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে তুলে ধরে করোনা চিকিৎসার নানা অব্যবস্থাপনার কথা। মুখ্যসচিবকে চিঠি দেন প্রতিনিধিদলের নেতা অপূর্ব চন্দ্র। প্রতিনিধিদল কলকাতার বাঙ্গুর হাসপাতাল, হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের কোয়ারেন্টিন সেন্টার, কলকাতার রাজারহাটের কোয়ারেন্টিন সেন্টার এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদল প্রশ্ন তোলে, বাঙ্গুর হাসপাতালে ৩৫৪টি করোনা চিকিৎসার বেড থাকলেও সেখানে রয়েছে ১২টি ভেন্টিলেটর। তাদের আরও অভিযোগ, এই রাজ্যে সঠিকভাবে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। পরীক্ষা হলেও ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরীক্ষার রিপোর্ট। এই চিঠি পাওয়ার পর মুখ্যসচিব পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালের সুপার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ১০ দফার এক নির্দেশিকা জারি করেন। এই নির্দেশিকায় উল্লেখযোগ্য রয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে হবে, কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সরকারি কোনো হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো যাবে না, রেফার করা হলে রোগীকে অন্য হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে বাধ্যতামূলক পিপিই পরাতে হবে, স্বাস্থ্য ভবনের কর্মকর্তাদের নিয়মিত বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা যেখানে বসেন বা যেসব জায়গা ব্যবহার করেন, তা জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, সেনিটাইজ করতে হবে ইত্যাদি। আর/০৮:১৪/২৫ এপ্রিল



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2yL6AFS
April 25, 2020 at 09:51AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top