নিউইয়র্ক, ০১ জুলাই - আমেরিকায় নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের প্যাটারসন সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে দুই বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। তাঁরা হলেন প্যাটারসনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিকের ভাই সেলিম খালিক (৫১) ও তাঁর সমর্থক আবু রেজিয়েন (২১)। সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ডাকযোগে আনা ব্যালটে কারচুপির মাধ্যমে আরেক বাংলাদেশি প্রার্থীকে পরাজিত করার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে। গত ১৯ মে অনুষ্ঠিত সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের প্যাটারসনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলম্যান শাহীন খালিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রার্থী হন মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। ভোট গণনা শেষে শাহীনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি পান ১ হাজার ৭২৯ ভোট। অন্যদিকে, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান পান ১ হাজার ৭২১ ভোট। নির্বাচন কমিশনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে আবারও ভোট গণনার আবেদন জানান আক্তারুজ্জামান। দ্বিতীয়বারের গণনায় আকতারুজ্জামানের ভোট বেড়ে যায়। তবে শাহীন খালিক এগিয়ে থাকেন তিন ভোটে। এরপর আবারও গণনার অনুরোধ জানালে তৃতীয় দফায় দুজনের সমান ভোট হয়। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় এবং ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন দ্বন্দ্বে থাকায় নিউজার্সি স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে ভোট নিয়ে প্রতারণা, ভোট ডাকাতি ও ভোট গণনার ফলাফল নিয়ে কারচুপির মামলা করা হয়। এই মামলার তদন্ত শুরু হলে ২৫ জুন শাহীন খালিকের বড় ভাই সেলিম খালিক ও তাঁর সমর্থক আবু রেজিয়েনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিলেটের বিয়ানীবাজারের সেলিম খালিক বসবাস করতেন প্যাটারসন সিটির ওয়েন এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয়েছে, ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনায় প্রতারণা (তৃতীয় ডিগ্রি), বেআইনিভাবে ব্যালট নিজের কবজায় রাখা (তৃতীয় ডিগ্রি), সরকারি নথির পরিবর্তন ঘটানো এবং ভোট গণনার ফলাফলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রদান (চতুর্থ ডিগ্রি) করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল গুরবির গ্রুয়েল গণমাধ্যমকে জানান, খালিক নির্বাচনের বিধি লঙ্ঘন করে প্যাটারসন সিটির দুই নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোটারের বাসায় যান। তাঁর কাছ থেকে একাধিক ব্যালট সংগ্রহ করেন। অথচ সেগুলো বিধি অনুযায়ী ডাকযোগে নির্বাচন কমিশনের অফিসে আসার কথা। খালিক সেগুলো এনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেন। সে সময় নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে পারেননি যে ভোটাররাই তাঁকে লিখিত অনুমতি দিয়েছেন ব্যালট পেপার বহনের জন্য। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, এ-১ ইলেজেন্ট ট্যুরস নামে খালিকের একটি বাস কোম্পানি রয়েছে। এ ছাড়া ইস্টার্ন স্টার ট্রান্সপোর্টেশন, এলএলসি নামেও (স্কুলের ছাত্রছাত্রী পরিবহন) তিনি একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন। সে ব্যবসায়ও জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। পৃথকভাবে সেগুলোর তদন্ত চলছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার প্রসপেক্ট এলাকার অধিবাসী আবু রেজিয়েনের বিরুদ্ধে ডাকযোগে আসা ভোট প্রদানে প্রতারণা (তৃতীয় ডিগ্রি) এবং বেআইনিভাবে নির্বাচনের ব্যালট দখলে রাখার (তৃতীয় ডিগ্রি) অভিযোগ করা হয়েছে আদালতে। অ্যাটর্নি জেনারেল উল্লেখ করেন, তিনি কমপক্ষে তিনটি ব্যালট পেপার ভোটারের কাছ থেকে ক্রয় করেন এবং তা নিজের দখলে রাখেন। এসব ব্যালট তাঁর কাছে রাখার অনুমতি ছিল না। আবু রেজিয়েনের কাছ থেকে একটি ইউএসবি ড্রাইভ জব্দ করা হয়েছে। সেটি যাচাই করার সময় একটি ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছ, তিনি তিনটির অধিক ব্যালট প্রদর্শন করছেন, যেগুলো পূরণ করা হয়নি। কিংবা প্রচলিত বিধি অনুযায়ী খামে ছিল না। অর্থাৎ তিনি ব্যালট সংগ্রহ করেছেন এবং নিজ ইচ্ছায় ভোট দেবেন, যদিও ব্যালটগুলো তাঁর নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ভোট জালিয়াতির অভিযোগে একই সিটির আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বর্তমান কাউন্সিলম্যান মাইকেল জ্যাকসন (৪৮) ও নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান আলেক্স ম্যান্ডেজ (৪৫)। তাঁদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে মানুষের বিদ্যমান আস্থায় সন্দেহের বা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটতে পারেএমন কোনো আচরণকেই আমরা সহ্য করব না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেলিম খালিকের সর্বোচ্চ ১৬ বছর এবং আবু রেজিয়েনের সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। জানা গেছে, মামলার তথ্য প্রকাশের সময় অভিযুক্তরা অ্যাটর্নিসহ হাজির হয়েছিলেন। এ কারণে তাঁরা দুজনই দ্রুত জামিন পেয়েছেন। উল্লেখ্য, এই আসনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান। চার বছরের মেয়াদ শেষে আবার প্রার্থী হলেও নিজের অবস্থানের ঠিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় শাহীন খালিকের কাছে তিনি পরাজিত হন। শাহিনেরও চার বছরের মেয়াদ শেষ। তাই তিনি আবার প্রার্থী হয়েছিলেন এ নির্বাচনে। শাহীন খালিকের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার এবং আকতারুজ্জামানের বাড়ি সিলেট সদরে। আট বছর ধরেই এই ওয়ার্ডের নির্বাচন ঘিরে নিজেদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার উদ্ভব হলেও এই প্রথম ভোট জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটল, যা কমিউনিটিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। এর জের পড়ছে গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটির ওপর। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্যাটারসনের বাস করা প্রবীণ একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরও নিরপরাধ ভাবার কোনো অবকাশ নেই। এন এ/ ০১ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2NLH07S
July 01, 2020 at 05:45AM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
ফিলাডেলফিয়ার রাজনীতিতে বাংলাদেশি অভিবাসীদের জয়জয়কার
07 Oct 20200টিপেনসিলভানিয়া, ৭ অক্টোবর- যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার সনদ যে নগরীতে গৃহীত হয়েছিল, সেই ফিলাডেলফিয়ার রাজন...আরও পড়ুন »
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসী হামলার গোলাপগঞ্জের যুবক নিহত
05 Oct 20200টিকেপটাউন, ০৫ অক্টোবর- দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সিলেটের গোলাপগঞ্জের যুবক জাকির হোসেন (৩৫) ন...আরও পড়ুন »
নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হট্টগোল
03 Oct 20200টিনিউইয়র্ক, ০৩ অক্টোবর- যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আবারও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বাংল...আরও পড়ুন »
নিউইয়র্কে গাড়ির ধাক্কায় বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু
03 Oct 20200টিনিউইয়র্ক, ০৩ অক্টোবর-যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেরিকোর লং আইল্যান্ড এক্সপ্রেসওয়েতে হেঁটে যাওয়ার সম...আরও পড়ুন »
জার্মানিতে বাংলাদেশি প্রবাসীর শতাধিক বাড়ি
02 Oct 20200টিবার্লিন, ০২ অক্টোবর- নিজের জমানো টাকায় কিশোর বয়স থেকে ব্যবসা শুরু করে জার্মানিতে এখন শতাধিক বাড়ির ম...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.