বিস্ময়কর এক দমের নাম নাম এন্ড্রু কিশোর, যে দম থেকে সুর বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে-বাতাসে, নদীতে-সাগরে এবং যেখানে-যেখানে, তাদের সবাইকেই জড়ায় সুরের আরামদায়ক উষ্ণতায়- দেশের জনপ্রিয় গায়ক এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে এ কথাগুলোই বলেছিলেন শিল্পী কনকচাঁপা। সেই এন্ড্রু কিশোরই আজ নিথর হয়ে পড়ে আছেন। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজশাহীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয় শিল্পীর হারানো শোকের এ দিনে সাত সুরের ভালোবাসায় এন্ড্রু কিশোরের এই দুঃসাহসী হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরা হলো । হাসপাতালের বিছানায় কত রাত যে তার নির্ঘুম কেটেছে, তার হিসাব মেলানো কঠিন। যতটা না যন্ত্রণা শরীরে, তার চেয়ে বেশি মনের গহিনে লুকিয়ে ছিল। কতদিন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ানো হয়নি। নতুন গান রেকর্ড করতে ছুটে যাওয়া হয়নি রাজধানীর স্টুডিওগুলোয়। কোনো ছবির প্লে-ব্যাক, টিভি আয়োজন কিংবা অডিও আকারে প্রকাশের জন্য গাওয়া হয়নি কোনো গান। পাঁচ দশক ধরে সংগীতের সঙ্গে যার ওঠা-বসা, গানই যার প্রাণ, তাকে একটি রোগের কাছে পরাস্ত হতে হবে- এটা মেনে নেওয়া ছিল কঠিন। কেমোথেরাপির বিষ দিয়ে কর্কট রোগ মোকাবিলায় নেমেছিলেন চিকিৎসকরা। একের পর এক কেমোথেরাপি সাইকেলে চলছিল তার চিকিৎসা। অসহনীয় যন্ত্রণা আর জটিল এই চিকিৎসায় পঙ্গুপ্রায় এন্ড্রু কিশোর। হাঁটা তো দূরের কথা, ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারেন না। কিন্তু যখন শুনলেন, সিঙ্গাপুর বিজনেস সোসাইটি ও বাংলাদেশ চেম্বারের আয়োজনে সিঙ্গাপুরের স্থানীয় গেটওয়ে থিয়েটার হলে এক সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে, তখন কোনোভাবেই তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। এন্ড্রু কিশোরের জন্য ভালোবাসা শিরোনামের সংগীতায়োজনে ছুটে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিনের পথচলার সঙ্গী, খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, মিতালী মুখার্জির মতো শিল্পী যে মঞ্চে গাইবেন, সেখানে তাকে যেতেই হবে। অনেকটা ছেলেমানুষি জেদ চেপে বসেছিল তার মাথায়। আমি যাব, আমাকে যেতেই হবে, গাইব, যেভাবেই পারি আমি গাইব- এই ছিল তার কথা। তার কথাগুলো শিশুদের আবদারের মতো শোনালেও কোনোভাবেই তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ৯ জানুয়ারির সেই সংগীতের আসরে গিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার অনিন্দ্য কণ্ঠস্বর। হাঁটতে পারেন না। সেদিন মঞ্চে এসেছিলেন হুইলচেয়ার করে। চোখেমুখে ভয়, ছিল বাঁচার আকুতি। ছিল সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা। গায়ে লাল পাঞ্জাবি, মাথায় কালো হ্যাট। সারা জীবন মঞ্চে দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়ে গান শুনিয়েছেন। এদিন গেয়েছেন হুইলচেয়ারে বসে। হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে গেয়ে উঠেছিলেন জীবনের গল্প, আছে বাকি অল্প... অমনি পুরো হল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। ছিল পিনপতন নীরবতা। প্লেব্যাক সম্রাটখ্যাত এই শিল্পী এরপর যখন গাওয়া শুরু করেন আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি... তখন অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। কণ্ঠশিল্পী [পুরুষ শাখায়] সর্বাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পী যেন নতুন করে সেদিন প্রমাণ করেছেন তার কণ্ঠ, গায়কী শুধু তার মতোই। তার তুলনা চলে শুধু তার সঙ্গেই। সেই কণ্ঠস্বর এখনও থেমে যায়নি, মানুষের কান থেকে হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে যুগ যুগ ধরে। এদিন শুধু গান গেয়েই শ্রোতাদের অশ্রুসিক্ত করেননি, অবাক করে দিয়েছেন মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দিয়ে। অসুস্থ সুরকার ও সংগীত পরিচালক সেলিম আশরাফের চিকিৎসা সহায়তায় ৫ হাজার সিঙ্গাপুরী ডলারের একটি খাম সাবিনা ইয়াসমিন ও সৈয়দ আবদুল হাদীর হাতে তুলে দিয়ে তিনি আবারও জানান দিয়েছেন মানুষ মানুষের জন্য এম এন / ০৬ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3f6yRqt
July 06, 2020 at 05:40PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন