টরন্টো, ১২ জুলাই- মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু। সত্যিই, বিশ্বের মানুষ যখন আজ করোনার করুন ছোবলে বিপর্যস্ত, আর্তমানবতার দীর্ঘশ্বাস আর সকরুণ চিৎকারে প্রকম্পিত আকাশ, বাতাস, উত্তর -দক্ষিণ আর পূর্ব -পশ্চিম, যখন প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ও পড়েছে এর নগ্ন থাবার বিষাক্ত ছোবল, তখন আমরা কি পারি না এই দুঃস্থ মানবতার পশে দাঁড়াতে ? হ্যাঁ, পারি। তাইতো দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও নাঁড়ীর অদৃশ্য তীক্ষ্ণ টানে সবার হৃদয়ে আজবিষাদ সিন্ধুর কালো স্রোতধ্বনি। বিশেষ করে দেশের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে কানাডায় বসবাসরত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডা ইনক (CUAAC) এর সকল সদস্যের প্রাণ বিচলিত হয়ে উঠেছে দেশের জন্যে কিছু একটা করার অভিপ্রায়ে। যেই ভাবা সেই কাজ।কোনো এক বিকেলে সংগঠনের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার, সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য, সংগঠনের আরেক একনিষ্ঠ কর্মী নাজমুল মুন্সী, কার্যকরী কমিটির সদস্য সুধান কুমার রায় এবং সংগঠনের আজীবন সদস্য আজিম উদ্দিন শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে যান আলোচনায়। সিদ্ধান্ত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে করোনা চিকিৎসা উপযোগী করার জন্যে কিছু করা যায় কিনা। দেরি নয়,নাজমুল মুন্সিকে দায়িত্ব দেয়া হয় ভাইস -চ্যান্সেলেরর সাথে যোগাযোগ করার। ঐদিনেই তিনি কথা বলেন ভিসির সাথে।ভিসি ডঃ শিরীন আক্তার আমাদের এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত মানবিক উদ্যোগ বলে আখ্যায়িত করেন এবং আমাদেরএই সহায়তার প্রচেষ্টা কে স্বাগত জানান। এখানে বলে রাখা ভালো যে, এই সংগঠন সবসময়আমরাতে বিশ্বাসী, আমিতে নয়।তাই আমাদের যে কোন সিদ্ধান্ত আমরা কার্যকরী কমিটিতে আলোচনা সাপেক্ষে নেইএবং সর্বস্তরের সদস্যদেরকেনিয়ে একসাথে কাজ করি।এখানেই আমাদের সার্থকতা, এখানেই আমাদের সফলতা। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। একদিন পরেই কার্যকরী কমিটির ভার্চুয়ালজরুরী সভা ডাকা হয়।সভায় সকল সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে আন্তরিকভাবেএই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন এবং ঐ বৈঠকেইকমিটির সকল সদস্যদের থেকে প্রায় ৬০০০ ডলারের (প্রায় ৪ লক্ষ টাকা)প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১০ লক্ষ টাকা। পরের দিন সবাইকে কমিটির সিদ্ধান্তই-মেইলে জানানো হয়। সেই সাথে ফোনে সবার সাথে যোগাযোগ করার লক্ষ্যে একটা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন যথাক্রমে: নাসিমা বেগম লাভলী , শরীফা কামাল মসী, তেহজীনা এমদাদ নুপুর, কানিজ ফাতেমা, সমর পাল, আ ম ম তোহা, আনোয়ার সাদাত, স্বপন কুমার নাথ, মোহাম্মদ আজম, হাসান তারিক চৌধুরী, তানভী রেয়াজি আলম, বিশ্বজিৎ পাল, রফিকুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন বাহার, তাপস ভট্টচার্য এবং সাজ্জাদ হোসেন। অভূতপূর্ব সাড়া মিলে সবার কাছ থেকে। সবার সম্মিলিত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাত্র ৭ দিনের মধ্যেই আমরা আমাদের লক্ষ্য ১০ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হয়ে যায়। সংগঠনের সর্বস্তরের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও আন্তরিকতায় আমরা সত্যিই অভিভুত। সংগঠনের ইতিহাসে এইটাই এত অল্প সময়ে এতবড় অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ, যা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং কৃতিত্বের দাবি রাখে। নাজমুল মুন্সি ভাই চবি মেডিকেল সেন্টার উন্নয়ন প্রজেক্টের আহ্ববায়ক ড: মুনীর উদ্দিনের সাথে কথা বলেন এবং আমাদের পরিকল্পনা উনার সাথে বিনিময়ীকরেন। একিই সাথে বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য চবি র প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর সাব্বির চৌধুরীকে সংগঠনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার।উনি অত্যন্ত বিজ্ঞতার সাথে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার পে অর্ডার বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংক একাউন্টে জমা করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহকারি হিসাব নিয়ামক তার প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সই করেন ও এই প্রজেক্টের আহ্ববায়ক ড: মুনীর উদ্দিনের সাথে কথা বলে টাকা হস্তান্তরের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন। এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও তিনি যেভাবে আন্তরিকতার সাথে আমাদের সহায়তা করেছেন এজন্যে উনাকে সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। সংগঠন হিসাবে আমরা দাবি করতে পারি আমরা আমাদের আর্তি সম্মানিত সদস্যবৃন্দের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি এবং আমাদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ ও বরাবরের মত উনাদের আস্থা আমাদের উপর রেখেছেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দ এবং গর্বের সাথে উল্লেখ করছি যে, কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে এতবড় অঙ্কের অনুদান প্রথম আমরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রজেক্টে দেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন অব কানাডা ইনক (CUAAC) এর তরফেও এটাই প্রথমবারের মত বড় অনুদান প্রদানের ঘটনা। এই অর্জন আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার, এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমাদের সম্পৃক্ততার, এই অর্জন আমাদের দুঃস্থ মানবতার পশে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয়ের। সবশেষে, এই দুঃসময়ে CUAAC দেশের সুচিকিৎসা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে, বিশেষ করে আমাদের অত্যন্ত প্রিয়, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে কেটেছে আমাদের যৌবনের একটা বিশেষ সময় , সেই বিশ্বাবিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পেরে গৌরব অনুভব করছি। সাথে সাথে এই মহতী উদ্যোগকে সার্থক করার জন্যে যারা সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে প্রাক্তন শিক্ষক মণ্ডলী, কার্যকরী কমিটির সকল সদস্য, আজীবন সদস্য, সাধারণ সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলী, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, এবং বিশ্বাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করছে এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে বাহাউদ্দিন বাহার, তাপস ভট্টচার্য, সাজ্জাদ হোসেন এবং বিশ্বজিৎ পাল সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। মানবতার পাশে দাঁড়ানোর সদ্বিচ্ছা আর ভালবাসার উষ্ণ আগ্নেয়গিরির গলিত তপ্ত লাভার বিচ্ছুরণ দেখে এবং সংগঠনের প্রতি দৃঢ় আস্থার বিমূর্ত রূপ দেখে আমরা সত্যিই আবেগাপ্লুত। এভাবে ভবিষ্যতে সংগঠনের যেকোন উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন এমন প্রত্যাশাই করছি।এরই সাথে দেশের এই দুর্যোগময় দুঃসময়ে আপনারা যে যেখানে আছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন এই আহবান করছি।কেননা বল কী তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী, পার হয় তোমাকে ধরে, দুর্বল মানুষ যদি? এম এন / ১২ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2ZYpeUs
July 12, 2020 at 06:42AM
Home
»
বিশ্ব বাংলা
» চবি মেডিকেল সেন্টারকে দশ লক্ষ টাকা প্রদান করলো টরন্টোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন