ঢাকা, ১৭ আগস্ট - যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই...। গানটি লেখা হয় ১৯৯০ সালে। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে গীতিকার হাসান মতিউর রহমান বলেন, আমি তখন থাকতাম ঢাকার সিপাহীবাগে। ভাড়া বাসায়। মলয় কুমার গাঙ্গুলী আমাকে ফোনে গানটির পরামর্শ দিলেন। বিষয়টি বিস্তারিত জানালেন। ওই রাতেই লিখতে বসি। কিন্তু অনেক ভেবেও শুরু করতে পারছিলাম না। সারা রাত কেটে গেল। চোখে ঝিমুনি। ভোরের দিকে একটা সূত্র পেলাম। মনে হলো, বঙ্গবন্ধু তো একজন মহান মানুষ, জনগণের বন্ধু। তিনি কখনো মরতে পারেন না। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। এমন যদি মিরাকেল হতো যে ভোরবেলা উঠে শুনি তিনি মারা যাননি। এসব ভাবতে ভাবতে লিখে ফেললাম যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই,/যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই! এতে কল্পনায় বঙ্গবন্ধুকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে, তেমনি জেল থেকে তাঁকে মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। লিখতে লিখতে আবেগে ঘন ঘন পুলকিত, শিহরিত হচ্ছিলাম। শেষ প্যারায় লিখলাম, কে আছে বাঙালি তাঁর সমতুল্য,/ইতিহাস একদিন দেবে তাঁর মূল্য/সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে যায় কি রাখা কখনো তা। এরপর পুরো গানটা শেষ করি। শুরু করে সেদিন এক বসায় গানটি লিখে ফেলেছিলেন হাসান মতিউর রহমান। সকাল ১০টায় মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে মলয় কুমার গাঙ্গুলীর বাসায় নিয়ে যান গানটি। হাসান মতিউর রহমান বলেন, আমি ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে তাঁকে লেখাটা দিই। বেশ কয়েকবার পড়ে তিনি হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন সুর করতে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এক বসায় ১৫ মিনিটে গানটি সুর করে ফেলেছিলাম। গানের সুর করতে করতে আমার স্ত্রী, গীতিকার হাসান মতিউর-আমাদের তিনজনের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরেছে। পরে আমি ফ্রান্সে গিয়ে একটি অনুষ্ঠানে গানটি গাই। এক বছর পর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে একটি কলেজের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) সামনে এই গানটি গাই। তিনিও কেঁদে ফেলেন। এরপর অনেকবার তাঁকে এই গানটি শুনিয়েছি। ১৯৯০ সালে গানটি মলয় কুমার গাঙ্গুলী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইলেও রেকর্ডিং হয়েছে ১৯৯১ সালের শুরুর দিকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল তখন। ওই সময় এই গানের সঙ্গে আরও কিছু গান, বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণসহ জনতার নৌকা নামে একটি অ্যালবাম বের হয় হাসান মতিউর রহমানের নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনা সুর থেকে। এক দিনেই সারা দেশে ছড়িয়ে যায় গানটি। ১৯৯৭ সালে গানটি সাবিনা ইয়াসমীনকে দিয়ে আবার গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেবার গানটির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন ফরিদ আহমেদ। গানটি নিয়ে সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, এই গান আমার হৃদয়ের খুব কাছের। আমি গর্ববোধ করি এটি গাইতে পেরে। এখনো মনে আছে, প্রচুর সাড়া পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা এই গানে কণ্ঠ দেওয়ার পর। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গান শুনে প্রশংসা করেছিলেন। আমার সংগীতজীবনের সেরা একটি অর্জন হয়ে আছে যদি রাত পোহালে শোনা যেত গানটি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে উনি বলেছেন আমার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া এ গানটি তুমি গেয়েছো। সুত্র : বাংলা ইনসাইডার এন এ/ ১৭ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3axkpWU
August 16, 2020 at 09:37PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন