ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর- বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস সৃষ্টিকারী নায়ক সালমান শাহ। মৃত্যুর দুযুগ পরও এখনও আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তার। এখনও টিভি পর্দায় তার অভিনীত ছবি প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন। তার অভিনীত ছবির গান টিভিতে প্রচার হলে তা দর্শক এড়িয়ে যেতে পারেন না! এমনও দেখা গেছে, একই সময়ে দুটি টিভি চ্যানেলের একটিতে নতুন কোনো ছবি প্রচার হচ্ছে আর অন্যটিতে সালমান শাহের ছবি প্রচার হচ্ছে- দর্শক যেন সালমান শাহের ছবি দেখার প্রতিই বেশি আগ্রহী। এ নায়কের ছবি দেখার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দর্শকরা শুধু তারই পারফরমেন্স বেশি উপভোগ করেন। নায়কের সঙ্গে কে আছেন- তা কখনই জরুরি কোনো বিষয় নয় দর্শকের কাছে। মৃত্যুর এত বছর পরও শুধু দুর্দান্ত অভিনয় এবং ফ্যাশনের ভিন্নমাত্রা দিয়েই আজও দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছেন সালমান। ঢাকাই ছবির ইতিহাসে এমন আর কোনো নায়কের ক্ষেত্রে এখনও ঘটেনি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা ববিতার সঙ্গে সালমান শাহ ৪টি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে- বাদল খন্দকারের স্বপ্নের পৃথিবী, দীলিপ সোমের মহামিলন, শিবলী সাদিকের মায়ের অধিকার ও জাকির হোসেন রাজুর জীবন সংসার। দুটি ছবিতে সালমানের মায়ের ভূমিকায় এবং দুটি ছবিতে সালমানের ভাবির ভূমিকায় অভিনয় করেন ববিতা। দীলিপ সোমের মহামিলন ছবির শুটিংয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ববিতা বলেন, কক্সবাজারে এ ছবির শুটিং হয়েছিল। আমার মনে আছে, একটি দৃশ্য ধারণ করা হচ্ছিল পাহাড়ের ওপর। দৃশ্যটিতে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলাম আমি, রাজীব ভাই, শারমিন, সালমান শাহ ও শাবনূর। সেই দৃশ্যটি ধারণের নানা সময় আমি শুটিংয়ে আনা অন্য একটি চেয়ারে বসি। কারণ হোটেল থেকে আমার চেয়ারটি নিতে মনে ছিল না। সালমান বিষয়টি খেয়াল করে এবং শুটিংয়ে তার নেয়া চেয়ারটি আমাকে দেয়। আমি নিষেধ করার পরও সালমান তার নিজের ব্যবহৃত চেয়ারটি তখনই আমাকে দিয়ে দেয় এবং সেটি স্থায়ীভাবে। সেই চেয়ারটি দীর্ঘদিন আমার কাছে সংরক্ষিত ছিল। তিনি আরও বলেন, আরও একটি ঘটনার কথা আমার মনে আছে। যখন মোবাইল ফোন প্রথম বাজারে এলো, সে সময় সাইজে অনেক বড় ছিল। তো আমি সেই মোবাইল ব্যবহার করতে পারতাম না। সালমানই আমাকে একটি চিরকুটে মোবাইল ব্যবহার করার পদ্ধতি প্রথম শিখিয়ে দিয়েছিল। সেটি দেখে পরবর্তীকালে মোবাইল ব্যবহার করা আমার কাছে বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল। সালমানের নিজের হাতের লেখা সেই চিরকুটটি এখনও আমার কাছে বেশ যত্নে রাখা আছে। সেই চিরকুটের মাঝে প্রায়ই আমাদের হারিয়ে যাওয়া সালমানকে খুঁজে বেড়াই। ও একটি কথা আমাকে প্রায়ই বলত, আপন মা না হলেও আপনি আমার সুইট মা। মা ছাড়া সে আমাকে অন্য কিছুই আর ডাকত না। সত্যিই এতটা বছর পরও তাকে নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি ভীষণ আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর সালমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান এ অভিনেতা। একজন অভিনেতা হিসেবে আপনি সালমানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? জানতে চাইলে ববিতা বলেন, সালমান শাহ অনেক বেশি ভালো অভিনেতা ছিল। পোশাক ফ্যাশনে নতুনত্ব তো সৃষ্টি করেছিলই, সেটি সবাই দেখেছেন এবং তার ফ্যাশন এখনও অনেকেই ফলো করেন সাধারণ জীবনে, এমনকি শিল্পী জীবনেও। এটি অনেক বড় বিষয়। আরও পড়ুন-বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তানভীর মোকাম্মেলের চলচ্চিত্র আর অভিনেতা হিসেবে সালমান নিজেই ছিল অনন্য। এমনভাবে সংলাপ বলত বা এক্সপ্রেশন দিত এটি বুঝার উপায় থাকত না, অভিনয় না কি সত্যি! পরিচালকের কাছ থেকে দৃশ্য বুঝে নিয়ে এমনভাবে সংলাপ বলত, তার সহশিল্পীর জন্যই সে অভিনয়ের কাউন্টার দেয়া কঠিন হয়ে যেত। সালমান সত্যিই অনেক বড় মাপের অভিনেতা ছিল। তার মতো অভিনেতার অকাল প্রয়াণ সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বেদনার ও কষ্টের। এ কষ্টটি আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে আরও দীর্ঘদিন। দোয়া করি, আল্লাহ যেন তার আত্মার শান্তি দেন ও তাকে বেহেশত নসিব করেন, আমিন। সূত্রঃ যুগান্তর আডি/ ০৩ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/3lHUi4R
September 03, 2020 at 06:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন