কলকাতা, ০৩ অক্টোবর- সামনেই বিধানসভার নির্বাচন। সময়ের হিসাবে মাত্র কয়েক মাস।তারপরই অপেক্ষমাণ ভোটের উৎসব। পুরো ভরতের নজর এখন গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দিকে। কলকাতার মসনদে কে বসবেন? সবার মুখে মুখে ঘুরছে এই প্রশ্ন। ২০২১ সালে নির্বাচনকে গণ্য করা হচ্ছে অগ্নিপরীক্ষা নামে। একদিকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় টিকে থাকার অগ্নিপরীক্ষা আর অন্যদিকে বিজেপির ক্ষমতা দখলের অগ্নিপরীক্ষা। কে জিতবে এই কঠিন রাজনৈতিক অগ্নিপরীক্ষায়, জানতে উৎসুক বাংলার আমজনতা থেকে সমগ্র ভারতের নাগরিক সমাজ। অঙ্কের হিসাবে ভারতে সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রকে গণ্য করা হয় স্পর্শকাতর পলিটিকাল জোন হিসাবে। এ রাজ্যগুলোতে কারা ক্ষমতায় এলো বা গেলো, তা শুধু প্রাদেশিক রাজনীতিতেই নয়, পুরো দেশে রাজনীতিকেও প্রভাবিত করে। ফলে বাংলার ভোটের রাজনীতি স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনোযোগের বিষয়। বাংলার রাজনীতিতে নাটকীয়তার শেষ নেই। সারা দেশের মধ্যে রেকর্ড করে বাংলায় কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় এসেছিল এবং সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকেছিল। আবার সেই লাল দূর্গও কোনো জাতীয় স্তরের দলের কাছে নয়, আঞ্চলিক ও তরুণ নেতা মমতার তোপে ধসে যায়। আবার এই বাংলাতেই প্রায়-শূন্য থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস ও বাম দলগুলো হয়ে গেছে ক্ষয়িষ্ণু। আরও পড়ুন: এবার করোনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে থাবা বসাল পশ্চিমবঙ্গের এমন রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে ভোটের দামামা বাজায় নড়েচড়ে বসেছে সব দল। দল সামানোর পাশাপাশি মিত্র বৃদ্ধির চেষ্টাও করা হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। বাস্তবের মাঠে রাজনীতি ক্রমশ উতপ্ত হচ্ছে সামনের বছরের নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে। যথারীরি রাজ্য সরকার ও দল নিয়ে ব্যস্ত মমতা। নেতা ও কর্মীদের মনোবল বাড়াচ্ছেন তিনি। সারা রাজ্য ঘুরে কাজ করছেন। হয়ত তলে তলে চিরশত্রু কংগ্রেস ও বামপন্থীদের সঙ্গেও সংলাপ চলছে। কারণ ভোট যদি ভাগাভাগি হয় তো বড় লাভ হবে বিজেপি। এজন্য বিজেপি বিরোধীদের একজোট করার একটা কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে তেল আর পানির মতো চিরবৈরী দলগুলোর মধ্যে মৈত্রী আদৌ সম্ভব কিনা, সেটাই বিরাট সন্দেহের বিষয়। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের নবশক্তিধর বিজেপি মমতার সরকারকে বিদায় করতে মরিয়া। দফায় দফায় বৈঠক করছেন দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের নেতারা। দলের শীর্ষ স্ট্র্যাটেজিস্ট, যাকে বলা হয় মর্ডান কৌটিল্য, সেই অমিত শাহ নিজে তদারকি করছেন সবকিছু। ব্যক্তিগতভাবে নজর দিচ্ছেন তিনি পশ্চিমবঙ্গে দল ও নির্বাচনের বিষয়গুলো। অমিত শাহের আগ্রহ ও হস্তক্ষেপ অবশ্যই নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভারতের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি অমিত শাহের মুকুটে নির্বাচনী সাফল্যের পালক অনেক। অল্প বয়সে শুধু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই হননি তিনি, হয়েছেন দলের মূল কাণ্ডারী ও পরিকল্পক। বিজেপির চালিকা শক্তির অন্যতম প্রদান ব্যক্তি তিনি। সংখ্যায় অত্যল্প কিন্তু অর্থ-বিত্ত-ব্যবসায় শীর্ষে অবস্থানকারী মাড়েয়ারি-জৈন ধর্মাবলম্বী মানুষ অমিত শাহ। গুজরাটের বেনিয়া-ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান অমিত শাহ যখন ভারতের যে রাজ্যে দলের হাল ধরেছেন, সেখানেই দেখিয়েছেন ইলেকশান ম্যাজিক। ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশে একটানে সংখ্যাগরিষ্ঠা ছিনিয়ে দলকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। ত্রিপুরার মতো প্রান্তিক রাজ্যেও তরুণ এক নেতাকে সামনে রেখে দীর্ঘবছরের কমিউনিস্ট শাসন তছনছ করে অমিত শাহের কৌশলেই ক্ষমতায় আরোহন করে বিজেপি। আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ সমালোচকরা বলেন, অমিত শাহ নির্বাচনে দলকে জেতাতে যা দরকার, তা-ই করেন। প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কিছুই বাদ দেওয়া হয় না। এমনই মরিয়া ও লড়াকু নীতি গ্রহণ করেন তিনি, যা সামলাতে পারেন না প্রতিপক্ষের নেতারা। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রাজনীতির মঞ্চে আলোচিত অমিত শাহের আবির্ভাব হলে রাজ্য রাজনীতির চেহারাই শুধু পাল্টে যাবেনা, সৃষ্টি হবে চরম উত্তেজনাও। এমনিতেই বিজেপি শূন্য থেকে রাজ্যের দ্বিতীয় শক্তিশালী দলে পরিণত হয়ে চনমনে মেজাজে আছে। ক্ষমতা দখলের স্বপ্নও তারা দেখছেন। এজন্য সকল শক্তি ও সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করতে পিছপা হবেনা বিজেপি। ফলে রাজনীতি ও নির্বাচক কেবল উতপ্তই হবে না, সহিংসও হয়ে যেতে পারে। করোনার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সামনের দিনগুলো খুবই উত্তেজক হয়ে উঠতে পারে বলেই ধারণা বিশ্লেষক মহলের। যদিও নির্বাচনে কার ভাগ্যে কেমন ফল হবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি, তথাপি নির্বাচন ও রাজনীতি যে চরম উতপ্ত ও স্পর্শকাতর হবে, সেটা বিলক্ষণ বলা যায়। সুত্র : বার্তা২৪ এম এন / ০৩ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36vJNwy
October 03, 2020 at 04:35PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন