লস অ্যাঞ্জেলস, ৩১ ডিসেম্বর-সিনেমাটোগ্রাফার হচ্ছে একজন চাক্ষুষ সাইকোলজিস্ট যিনি দর্শকদের নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করেন এবং দর্শকদের এমনভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করান যেভাবে চিন্তা করার দরকার ছিল। ঠিক যেন অন্ধকারে ছবি আঁকার মতো।- বলেছেন আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার গরডন উইলিস। অন্যান্য সব বছরের মতো এবারও সিনেমাগুলোর দিকে যদি তাকাই, তাহলে প্রতিভাবান কিছু কাজের উদাহরণ পাওয়া যাবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এবছরের সেরা চিত্তাকর্ষক সিনেমাটোগ্রাফিগুলো। অ্যারাইভাল (ব্র্যাডফোর্ড ইয়াং) সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে ব্র্যাডফোর্ড ইয়াংয়ের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে খুব বেশি দিন আগে নয়। তবে অভিজ্ঞতা খুব বেশি দিনের না হলেও এ পেশায় তিনি শীর্ষস্থান দখলকারীদের একজন। ড্যানিশ ভিলেনিউভ পরিচালিত বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীমূলক চলচ্চিত্র অ্যারাইভাল এর সিনেমাটোগ্রাফির জন্য তিনি ছিলেন যথার্থ উপযুক্ত। এর বিভিন্ন প্লটকে তুলে ধরার জন্য সঠিক লেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি একে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। কেবল তারকাদের দিকে ফোকাস না করে অন্যান্য চরিত্রদেরও সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই নির্মাতা। এ বিগার স্প্ল্যাশ (ইয়োরিক লি সক্স) ক্লাউডস অব সিস মারিয়া, পারসোনাল শপার এবং অনলি লাভারস লেফট অ্যালাইভ ছবির পর ইয়োরিক লি সক্স এবছর আমাদের উপহার দিলেন এ বিগার স্প্ল্যাশ। লুকা গুয়াড্যানিনো পরিচালিত এ চলচ্চিত্রের দৃশ্যগুলো খুব সাধারণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে তিনি তুলে ধরেছেন মনোরম সিসিলিয়ান দ্বীপের দৃশ্য যেখানে তারা বাস করতেন। এছাড়া আরও আছে রাফ ফাইনসের উদ্ধারের দৃশ্য যা খুব সুন্দরভাবেই ধারণ করেছেন ইয়োরিক লি সক্স। সেমিটারি অব স্প্লেন্ডর (ডিয়েগো গারসিয়া) এপিচ্যাটপং উয়িরাসেথাকুল পরিচালিত চলচ্চিত্র সেমিটারি অব স্প্লেন্ডর এর সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হল ছবিটি আপনাকে তৃপ্তি এনে দেবে। দিয়েগো গারসিয়ার সিনেমাটোগ্রাফিতে তৈরি এ চলচ্চিত্র আপনাকে যেন অন্য আবহাওয়ায় নিয়ে যাবে। এটা শুনতে হয়তো ভয়ংকর লাগবে। তবে তেমন কিছু না, বরং এর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নাটকীয় উপাদানগুলো আপনার মনকে আরও শান্ত করে দিবে। সারটেইন উইম্যান (ক্রিস্টোফার ব্লভেল্ট) কেলি রিচার্ড পরিচালিত সারটেইন উইম্যান চলচ্চিত্রে খুব শান্ত ও মনোরমভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রধান চরিত্রগুলোর আবেগের ব্যবধানকে। এ চলচ্চিত্রে তাদের এক আবেগপ্রবণ সংলাপের সময় ক্রিস্টোফার ব্লভেটের ১৬ মিলিমিটার লেন্সের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমাংশের অবনমিত এবং বিশাল ব্যাপ্তির দৃশ্য। এমন দৃশ্য এখনকার চলচ্চিত্রে খুব কমই দেখা যায়। দ্য চাইল্ডহুড অব এ লিডার (লল ক্রলি) বিস্তৃত বর্ণনামূলক এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা যেন এই পরিচালকের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যখন আকাঙ্ক্ষা আর আইডিয়াগুলো অনেক বড় হয়, তখন সেটা খুব সহজভাবে উপস্থাপন করাও যেন ব্র্যাডলি করবেটের কাজ। কঠিন আইডিয়াগুলোর সাথে সমন্বয় করার জন্য লল ক্রলিকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। এখানে আছে একজন ইউরোপিয়ানের দ্বারা প্রভাবিত চরিত্র যিনি একই সঙ্গে কোমল এবং ভয়ংকর। নিঃসন্দেহে বলা যায় এর সিনেমাটোগ্রাফি খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। কসমস (আন্দ্রে জ্যানকোস্কি) আন্দ্রেজ জুলাওস্কির পরিচালনা এবং আন্দ্রে জ্যানকোস্কির যথাযথ সমন্বয়ে তৈরি পরিপূর্ণ একটি চলচ্চিত্র কসমস। এতে শুধু মদ্যপ এবং অন্যান্য দৃশ্য, বিভিন্ন শুটের মধ্যকর দৃশ্য। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি সিনেমাটোগ্রাফি। এর শুধু কাহিনী এবং সংলাপগুলোই নয়, বরং এই চলচ্চিত্রটি এবছরের সেরা ফটোগ্রাফি ফিল্মগুলোর মধ্যে একটি। ডিসঅর্ডার (জর্জেস লিচেপ্টইস) এই চলচ্চিত্রে আছে অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ও আবেগপ্রবণ ঘটনা। এর মূল চরিত্র হচ্ছে একজন নিপীড়িত প্রাক্তন সৈনিক যিনি হচ্ছেন একজনের স্ত্রী (ড্যানি ক্রুগার) এবং তার পুত্র একজন ধনী ব্যবসায়ীর দেহরক্ষী। অ্যালিস উইনোকর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং এ সময়ে মানুষের ভীতি। সবকিছু মিলিয়ে জর্জেস লিচেপ্টইসের সিনেমাটোগ্রাফি এবছরের ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইমব্রেস অব সারপেন্ট (ডেভিড গ্যালিগো) ইমব্রেস অব সারপেন্ট চলচ্চিত্রে কারমাকেট নামে একজন চরিত্র থাকে যিনি অনেক কাল্পনিক ব্যাপারে বিশ্বাস করতেন ও প্রাচীন পদ্ধতিতে বসবাস করতেন। এর পরিচালক কাইরো গুয়েরা যেন এপিচ্যাটপং উয়িরাসেথাকুলের আরেকটু প্রাকৃতিক সংস্করণ। তিনি এতে নিয়ে এসেছেন কিছু ফ্লয়েডীয় মনঃস্তত্ব, আবেগ এবং কারমাকেটের লম্বা এক জীবনযাত্রা। তিনি এতে আরও দেখিয়েছেন স্বপ্ন আমাদের আত্মার সঙ্গে এমনভাবে সম্পর্কিত, ঠিক এটা যেন আমাদের জীবনের একটি কম্পাস। অন্যদিকে জঙ্গল কোনো ভ্রমণের জায়গা নয়, বরং এটা নিজেকে সমর্পণ করার জায়গা। এতে রয়েছে লম্বা কিছু শুট, আবার অনেক ছোট শট যার মধ্যমে আবেগপ্রবণ মুহূর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে এবং এজন্য অবশ্যই ডেভিড গ্যালিগোর ক্যামেরার কাজের জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে। দ্য ফিট (পল য়ি) অ্যানা রোজ হমারের পরিচালিত দ্য ফিটস চলচ্চিত্রে রয়েছে অনেক চমৎকার দৃশ্য, এর মিউজিক এবং ভিতরের বিভিন্ন স্থানের সৌন্দর্য যে কাউকে আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। এর ভেতর নাচের মহড়ার দৃশ্যগুলো এতই দ্রুত যে ঠিক যেন একটা বক্সিং ম্যাচের মতো। এই চলচ্চিত্রের অনেক দৃশ্য শুট করা হয়েছে হাই টাওয়ার শুটের মাধ্যমে এবং এর ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এমন বাস্তবভাবে অনেককিছু তুলে ধরার মতো চলচ্চিত্র খুব কমই আছে এবং এর জন্য পল য়ির সিনামাটোগ্রাফির গুরুত্ব ছিল উল্লেখযোগ্য। সূত্র- দ্য ফিল্ম স্টেজ আর/১০:১৪/৩১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2ioJ7Oa
January 01, 2017 at 04:11AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top