এই বিশেষ দিবসের আসলে তেমন কোনো মানে হয় না, যদি বছরের প্রতিটি দিন বাবার জন্য সন্তানের আবেগ একই রকম থাকে। কিন্তু যেহেতু মানুষ পারিবারিক ও সামাজিক জীব, তাই তাদের মধ্যেও রয়েছে ভালো লাগা মন্দ লাগার ব্যাপার স্যাপার। সেখান থেকেই শুরু হয় মনোমালিন্য। বাবার সঙ্গে সন্তানদের দূরত্ব তৈরি হতে সময় লাগে না। কিন্তু এই বিশেষ দিন, অর্থাৎ বাবা দিবসেই আমরা স্মরণ করি, আমরা আমাদের বাবাকে কতটা ভালোবাসি। সত্যি বলতে, প্রতিটি দিন হওয়া উচিত বাবা-মায়ের জন্য। তাদের অবদানেই তো পৃথিবী দেখা, এই বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। কিন্তু যেহেতু প্রতিদিন ঘটা করে বাবার জন্য সময় বরাদ্দ করে উদযাপন করা যায় না, তাই হিসেব করে বেছে নেয়া হয়েছে একটি বিশেষ দিনকে। প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববারের হিসাবে সারা দুনিয়াতেই পালিত হয় দিনটি। বিশ্বের প্রায় ৬৩ দেশে এ দিবসটি পালিত হয়। বাবা ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর ব্যাপকতা বিশাল। বাবা ডাকের মাঝেই লুকিয়ে থাকে গভীর ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও নির্ভরতা। সাহিত্য, সঙ্গীত, কবিতা থেকে সিনেমা- সব ক্ষেত্রেই বাবা স্থান করে নিয়েছেন এক দায়িত্বশীল স্নেহময় পুরুষ হিসেবে। আমার মতো যাদের আজ বাবা বেঁচে নেই, তারা হয়তো আকাশে তাকিয়ে অলক্ষ্যে বাবার স্মৃতি স্মরণ করবেন। আর যাদের বাবা আছেন, তারা তো নিশ্চয়ই উৎসব পালনের কথা ভাবছেন। কেউ হয়তো বাবার সঙ্গে শপিং করার পরিকল্পনা করছেন, কিংবা রোজার এই সময়টিতে বাবার পছন্দের ইফতারি তৈরি করে চমকে দেয়ার প্ল্যান করে রেখেছেন। আর যদি কিছু না-ও ভেবে থাকেন, চিন্তা নেই। ঘরে বসে বাবার সঙ্গে বসে দেখে ফেলুন বাবাকে নিয়ে নির্মিত হলিউড বলিউডের কিছু সিনেমা। বাবাকে নিয়ে হলিউড-বলিউডে নির্মিত হয়েছে অনেক সিনেমা। বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে বাবা কেন্দ্রিক সিনেমা নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন- পা বলিউডের একটি চমৎকার আবেগঘন ছবির নাম পা৷ এই ছবিতে বাস্তব জীবনের পিতা অমিতাভ বচ্চন তেরো বছরের অসুস্থ কিশোর চরিত্রে অভিনয় করেন। আর তার সত্যিকারের সন্তান অভিষেক বচ্চন সেই কিশোরের পা অর্থাৎ পিতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। পা ছবিতে ৬৮ বছর বয়সী অমিতাভ বচ্চন এক তেরো বছরের কিশোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, যে কিশোর এক দূরারোগ্য রোগের শিকার। বারো বছর বয়সেই যে রোগে মানুষের বার্ধক্যের শুরু। বারো বছরে মানুষটির বয়স হয়ে যায় আশিরও বেশি। রোগের নাম প্লেগোরিয়া। অসাধারণ এই চরিত্রের জন্য এমন মেকআপ নিতে হয়েছে অমিতাভকে যার জন্য প্রত্যেকবার শুটিংয়ের আগে সময় লেগেছে অন্তত চার ঘণ্টা। পা এমনই একটা ছবি যে ছবি আসলে পিতাপুত্রের সম্পর্কের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এই ছবিকে আপন করে নেন বলিউডের সকল শ্রেণির দর্শক। পিকু কথায় আছে সারল্যের মধ্যেই রয়েছে চূড়ান্ত আভিজাত্য। আর পিকু ছবি এই বাক্যেরই অনুমোদন। বলিউড মানেই আর রঙচঙে জামাকাপড় পরে নাচ, প্রেমের কাল্পনিক গল্পগাঁথা বা অযথা সেক্স যে নয়, তা বেশ কয়েকবছর ধরেই প্রমাণ করেছেন বলিউডের সিনেমা পরিচালকরা। তেমনি পিকু এক সাধারণ বাঙালি মেয়ের গল্প। পিকু (দীপিকা পাডুকোন) এবং তার বাবা ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (অমিতাভ বচ্চন)-এর সম্পর্ক নিয়ে তৈরি এই ছবি। ভাস্করবাবু যিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন। একটি ক্যাব সংস্থার মালিক রানা চৌধুরির (ইরফান খান) সঙ্গে মিষ্টি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে পিকু। আসল গল্প শুরু হয় যখন পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে এই চরিত্র দিল্লি থেকে কলকাতা যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। বাবা-মেয়ের ঢাল মিষ্টি সম্পর্কই এই ছবির পটভূমি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন সুজিত সরকার। বিগ ফিশ হলিউড ছবি বিগ ফিশ নির্মাণ করা হয় ২০০৩ সালে। ছবিটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন ইয়ান ম্যাকগ্রেগর ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন বিলি ক্রুডুপ। ছবিটিতে ছেলে তার বাবার তথ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তার বাবা অত্যন্ত চতুর। ফলে বাবা সম্পর্কে কোনো তথ্য বের করা অত্যন্ত কঠিন ছিল ছেলের পক্ষে। মূলত এখানে মা-বাবার রহস্য বের করার চেষ্টা করা হয়েছে। ছবিটি সেই বছর অস্কারের জন্য মনোনয়ন পায়। ফাদার অব দ্য ব্রাইড হলিউড ছবি ফাদার অব দ্য ব্রাইড ১৯৫০ সালে মুক্তি পায়। এতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেন স্পেন্সার ট্রেসি ও মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন এলিজাবেথ টেলর। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, একজন বাবার তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন, আশা ও বাস্তবতা। মেয়ে এলিজাবেথ যখন তার বিয়ের ঘোষণা দিয়ে দেন; সেই থেকে তার মধ্যবিত্ত বাবার বিয়ের প্রস্তুতি, অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা ও সন্তানের বেড়ে ওঠার স্মৃতিগুলো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী ম্যানচেস্টার বাই দ্য সী ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হলিউড সিনেমা। ছবিটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন কেনেথ লোনারম্যান। এতে অভিনয় করেছেন কেসি অ্যাফ্লেক, মিচেল উইলিয়ামস, কাইল চ্যান্ডলার ও লুকাস হেজেস। ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। পরে ১৮ নভেম্বর, ২০১৬ যুক্তরাষ্ট্রে সীমিত এবং ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পায়। ৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি সারাবিশ্বে ৬৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। ছবিটি একাডেমি পুরস্কারে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পায়। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কেসি অ্যাফ্লেক ও শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্য বিভাগে কেনেথ লোনারম্যান পুরস্কার পান। এছাড়া গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারে পাঁচটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে সেরা অভিনেতা বিভাগে পুরস্কার পায় ছবিটি। ফাইন্ডিং নেমো ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিকচার অ্যানিমেশন স্টুডিওর প্রযোজনা এবং ওয়াল্ট ডিজনি পিকচারের পরিবেশনায় মুক্তি পায় অ্যানিমেশন মুভি ফাইন্ডিং নেমো। মুক্তির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক সাড়া জাগায় সিনেমাটি। সেই সাথে আলোড়ন তোলে সারা বিশ্বে। ৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার পাশাপাশি সেরা অ্যানিমেশন ছবি হিসেবে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডও পায় সিনেমাটি। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট ফাইন্ডিং নেমোকে এ যাবৎকালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে রূপান্তরিত থ্রি ডি ভার্সন মুক্তির প্রথম সপ্তাহে উত্তর আমেরিকাতে ১৬.৭ মিলিয়ন ডলার আয় করে। মা-হারা এক ছোট্ট শিশু ক্লাউনফিশের কাহিনি নিয়ে গড়ে ওঠা এ সিনেমাতে দেখা যায়- জন্মের আগেই মাকে হারায় নেমো। পরবর্তীকালে নেমোর বাবা তাকে সাগরের নানা বিপদ সংকুল পরিস্থিতি থেকে আগলে রাখতে চাইলেও অ্যাকুরিয়ামের জন্য মনোহর মাছ ধরতে আসা শিকারিদের হাতে ধরা পড়ে নেমো। এরপর নেমোর বাবা তাকে উদ্ধার করার সংগ্রামে নামে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত বাবা-ছেলের পুনর্মিলন হয়। ফাদারস ডে ১৯৯৯ সালের ৯ মে মুক্তি পায় হলিউড সিনেমা ফাদারস ডে। ইভান রেইটম্যানের পরিচালনায় এই কমেডি ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেম রবিন উইলিয়ামস, বিলি ক্রিস্টাল, নাতাশা কিনস্কির মতো হলিউড তারকারা। ছবির কাহিনি এমন- একটি ছেলেকে দুজন ব্যক্তি তাদের নিজের সন্তান মনে করেন। নিজেদের সন্তান প্রমাণের জন্য হাস্যরসের সঙ্গে আবেগের মিশ্রণে নানা কায়দা অবলম্বন করেন দুই ব্যক্তি। বাবা দিবসে বাবার সঙ্গে বসে দেখার জন্য সিনেমাটি একেবারে উপযুক্ত। জুনিয়র ১৯৯৪ সালের ২৩ নভেম্বর মুক্তি পায় আলোচিত হলিউড সিনেমা জুনিয়র। আবেগ ও কমেডির মিশ্রণ সংবলিত এই ছবিতে অভিনয় করেছেন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, এমা থম্পসন, পামেলা রিডসহ অনেকে। এই ছবিটিও পরিচালনা করেছেন ইভান রেইটম্যান। ছবির কাহিনিতে দেখানো হয়েছে, একজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে বিশ্বের প্রথম পুরুষ হিসেবে গর্ভধারণ করেন। নানা হাস্যরসের মধ্যে কাহিনি এগিয়ে গেলেও ছবিতে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার একই সঙ্গে মা ও বাবা হওয়ার অনুভূতি রপ্ত করেন। গোল্ডেন গ্লোবে সে বছর সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পান আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://ift.tt/2sGnS2u
June 18, 2017 at 10:01PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন