ভারত- পকিস্তান যুদ্ধ বলিউডেও উঠে এসেছে নানা সময়। যেটা হওয়ার কথা। নিজ দেশকে বড় করে দেখিয়েছে ভারত। তবে বলিউডের কিছু সিনেমা ভিন্নপথেও হেটেছে। তারা দেখিয়েছে সম্পর্ক ভালো হতে পারে দুটি দেশের। যুদ্ধ নয়, নানাভাবে শান্তি ফিরে আসতে পারে। দেখে নেয়া যাক সেই তালিকাটি- বীর জারা: শাহরুখ খান ও প্রীতি জিনতা অভিনীত ছবিটি নির্মাণ করেছেন যশ চোপড়া। রোমান্টিক ধাচের এ সিনেমার নায়িকা পাকিস্তানি ও নায়ক ভারতের। কট্টরপন্থীরা এই সিনেমার সমালোচনাতে মেতেছিল। বিশেষ করে পাকিস্তানী তরুণীর সঙ্গে ভারতীয় যুবকের প্রেম দেখানোর ব্যপারটা মেনে নিতে পারেনি অনেকে। তাদের যুক্তি ছিল, শত্রুর সঙ্গে বন্ধুতা হয়, কিন্ত পাকিস্তানীদের সঙ্গে সম্ভব নয়। আবার ভারতীয় সিনেমায় পাকিস্তানের মানুষজনকে মহান হিসেবে দেখানো হয়েছে- তারও নিন্দা করেছে অনেকে। পরিচালক যশ চোপড়ার ভাষ্য ছিল- তিনি মানুষকে নিয়ে গল্প লিখেছেন, তাতে ভারতীয় বা পাকিস্তানী বিবেচনায় আনেননি। দুই দেশের ভাষা আর সংস্কৃতি মিলে যায় বলেই ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের নাম এসেছে, নইলে হয়তো সেখানে চীনও থাকতে পারতো। বীর জারা বলিউডের রোমান্টিক সিনেমার ধারায় এক ইতিহাসের নাম। ভালোবাসা মানে তো শুধু প্রাপ্তি নয়, অপ্রাপ্তিতেও ভালোবাসা হয়, অনন্ত অপেক্ষাতেও বন্দী প্রকোষ্ঠে ভালোবাসা লুকিয়ে রয়- এই বার্তাটা যশ চোপড়া-শাহরুখ খান-প্রীতি জিনতারা জানিয়েছেন ছবিটির মাধ্যমে। ভালোবাসা যেমন চিরসবুজ, মুক্তির পনেরো বছর পরেও বীর-জারা আমাদের কাছে তেমনই নতুন, তেমনই সজীব। বজরঙ্গি ভাইজান: ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বাসা ছিল পাকিস্তানেও। ভারতে বক্স অফিসে প্রথম সপ্তাহেই বাজিমাতের পর এ বার সাফল্যের ঢেউ আছড়ে পড়ে পাকিস্তানেও। বর্ডার পেরিয়েও হাউসফুল হয় ভাইজান। গল্পের টানে, পারদর্শী অভিনয়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছেন সালমন খান। ছবি দেখতে দেখতে আবেগে কেঁদে ভাসিয়েছেন নাকি পাকিস্তানি দর্শকরাও। পাক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রশংসায় ভেসেছে টিম বজরঙ্গি ভাইজান। তারা বলেছেন, যেভাবে ভারত-পাক সম্পর্ককে দেখানো হয়েছে তা এককথায় অসাধারণ। দুই দেশের মানুষের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। দুই দেশের মানুষকেই নেগেটিভ ও পজিটিভলি দেখানো হয়েছে। গল্পের নায়ক ভারতীয় হলেও তার সাহায্য যে পাকিস্তানিরা করতে পারে সেটা দেখানো হয়েছে ছবিতে। এক থা টাইগার ও টাইগার জিন্দা হে: সালমানের খানের এ ছবিটি ভারত ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা এজেন্টের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ছবিতে টাইগার চরিত্রে সালমান খান ছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দা চরিত্রে। আর পাকিস্তানের গোয়েন্দা আইএসআইয়ের সদস্য জোয়া চরিত্রে ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। দুজনের প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে দুটি ছবিতে। স্পাই, থ্রিলার, আকশন ধাচের সিনেমাতে দু দেশের প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ভাগ মিলখা ভাগ: ১৯৪৭ সাল। দেশভাগের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জীবনের অন্তিমক্ষণে সিং পরিবার। মিলখা সিং-এর বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কিশোর মিলখার চোখের সামনেই মেরে ফেলা হলো বাবা-মা, ভাইবোনদের। গল্পটা মিলখা সিংয়ের। এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতা, অলিম্পিকে ইতিহাস তৈরি করা ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তি অ্যাথলেট মিলখা সিং। তার বায়োপিক নির্মাণ করেছিলেন রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরা। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারহান আখতার। ছবিতে অধিকাংশ অভিনেতা-অভিনেত্রী বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। ফারহান আখতারও নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। আর সোনম কাপুর তো নিয়েছেন মাত্র ১১ রুপি। ছবিতে দ্বন্দ্বর পাশাপাশি দু দেশের আত্মিক বন্ধনও দেখানো হয়েছে। দেশ ভাগের সময় যা শেষ হয়ে যায়নি। মিলখা সিংয়ের এখনও যে আত্মার মানুষ পাকিস্তানে আছে তা দেখানো হয়েছে। ম্যায় হু না: ফারাহ খান পরিচালিত ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। ছবিতে দেখানো হয় একশ্রেনীর ভারতীয় উগ্রবাদী কোনভাবেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চায় না। কিন্তু ভারতীয় সরকার আগ্রহী হয় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে। তাদের সেই উদ্যোগ যেন ভেস্তে যায় সেই চেষ্টা করে সুনীল শেঠীর নেতৃত্বের উগ্রবাদি দল। আর তা থেকে রক্ষা করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য মেজর রাম চরিত্রের শাহরুখ। গাদার: এক প্রেম কথা: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবি মুক্তি পায় ২০০১ সালে। এক ভারতীয় (সানি দেওল) এবং এক পাকিস্তানী তরুণীর(আমিশা পটেল) মন দেওয়া-নেওয়ার গল্প তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। অনিল শর্মা পরিচালিত এই ছবির টিকেট বিক্রি হয় ৫ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার। বলিউডের অন্যতম ব্যবসা সফল সিনেমা এটি। সানী ও আমিশার জীবনের সেরা সিনেমা তো বটেই। ফানা: ফানা ছবিতেও পাকিস্তানি আমির খানের প্রেমে পড়েন কাজল। তবে সেই প্রেমে ছিল ধোকা। আমির খান ছিল মূলত জঙ্গি। টুরিস্ট গাইডের ছদ্ববেশে প্রেম করে। অত:পর এক সময় আবিস্কার হয় আমির খানের পরিচয়। তখন দ্বিধায় পড়ে যায় ভারতীয় কাজল। স্বামী ও সন্তানের বাবাকে কিভাবে প্রত্যাখ্যান করবে। সিনেমায় জঙ্গিবাদ, ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের চেয়েও প্রেমটা দেখানো হয়েছে গভীরভাবে। পিকে: ছবিতে সুশান্ত সিং একজন পাকিস্তানি যুবক। তার প্রেমে পড়ে ভারতীয় যুবতী আনুশকা। ভারতীয় পরিবার কোনভাবে মানতে পারেনি পাকিস্তানি যুবককে। এক সময় দুই দেশের প্রেমে মিলন ঘটনায় পিকে আমির খান। এছাড়াও ওয়ার ছোড় না ইয়ার (২০১৩), পিনজার, হেনা, কিয়া দিল্লী কিয়া লাহোর, হ্যাপি ভাগ জায়েগি, টোটাল সিয়াপ্পা, হেই রাম, মন্টো, ট্রেন টু পাকিস্তান , রাজি ছবি গুলোতে দু দেশের সুসম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। এত এত দ্বন্দ্ব বিষাদের মধ্যেও যে প্রেম ও বন্ধুত্ব আছে তা তুলে ধরা হয়েছে। এইচ/০০:২০/২৮ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2H6uOw4
February 28, 2019 at 06:21AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন