মুম্বাই, ১৮ ফেব্রুয়ারি- নিজের ঘরে যদি পোকা ঢুকে, তাহলে কি করতে পারি আমরা? অবশ্যই ক্ষতি করার আগেই পোকাটাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত নিজের ঘরের ভিতরে নানা পোকায় আক্রান্ত হই। আক্রান্ত হলে মেরে ফেলার চেষ্টা করি। কিন্তু ঘরে যাতে পোকা ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করি না, দিনের পর দিন পোকা ঘরের ভিতরে নিয়ে বসে থাকি। এরপর ধীরে ধীরে সেই পোকা ছড়িয়ে যায় আমার ঘর থেকে তার ঘরে, তার ঘর থেকে তার ঘরে, তারপর শহর ছাড়িয়ে অন্য শহরে। এ ওয়েডনেস ডে ছবির গল্পটা এমনই। পরিচালক নিরাজ পান্ডে এই ছবিতে দেখিয়েছেন একটি রাষ্ট্র কিভাবে দিনের পর দিন জঙ্গি আর উগ্রপন্থিদের ঘরের ভিতর পোষে, হাতের কাছে পেলে সমূলে ধ্বংস করার বিপরীতে।দিনের পর দিন আইনের মারপ্যাঁচে এই জঙ্গি ও উগ্রপন্থিদের কিছু হয় না, একপর্যায়ে জেল থেকে তারা বের হয়ে আসে, তারপর আবার শুরু হয় ট্রেন বিস্ফোরণ। কখনো কখনো এই জঙ্গিরা জেলের মধ্য থেকেই চালিয়ে যায় তাদের কর্ম। ওয়েডনেস ডে ছবিতে নাসিরউদ্দিন শাহ কমন স্টুপিড ম্যানের চরিত্রে স্বভাবসুলভ দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। যিনি সাধারণ একজন মানুষ হয়ে কিভাবে স্বোচ্চার হয়ে যায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। যে যাই বলুক, ভারত স্পটতই জঙ্গি হামলা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। কয়েক দশকের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিরা যত হামলা চালিয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারির হামলাটি তার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এদিন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) গাড়িবহরে বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি হামলায় অর্ধ শতাধিক সেনা সদস্য নিহত হয়।এ নিয়ে উত্তাল ভারত। উত্তাল ভোরতের সিনেমা জগতও। জঙ্গি হামলা ভারতে নতুন নয়। জঙ্গি দমনে ভারত সরকারের যেমন পদক্ষেপ রয়েছে, তেমনি স্বোচ্ছার বলিউডও। নানা সময়ে জঙ্গি দমনকে কেন্দ্র করে সিনেমা বানিয়েছেন তারা। জঙ্গিও যেন বলিউডের একটা জনরা। জঙ্গি হামলা নিয়ে ২০০০ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় মিশন কাশ্মীর সিনেমাটি। ছবিটির প্রধান চরিত্র ভারতের কাশ্মীরের আলতাফ নামের এক তরুণ, যে ছোটবেলায় তার মা বাবার ঘাতক এক পুলিশ অফিসারের কাছেই পালিত হয়। যখন সে তা বুঝতে পারে, সে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। আলতাফ চরিত্রটি করেছেন হৃত্বিক রোশান। আর তার পালিত বাবা পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত। ২৩ বছর বয়সী এক ভারতীয় তরুণীর গল্প নিয়ে নির্মাণ হয় নীরজা। মেয়েটির নাম নীরজা ভানোত। তার বায়োপিকে অভিনয় করেন সোনম কাপুর। প্যান অ্যামের ফ্লাইট ৭৩-এর সিনিয়র পার্সার সে। ১৯৮৬র ৫ সেপ্টেম্বর করাচী থেকে বিমানটি ওড়ার আগে ৩৬১জন যাত্রীসহ ছিনতাই হয়। আবু নিদাল গ্রুপের সদস্যরা বিমানটি ছিনতাই করে। ছিনতাইকারীদের উদ্দেশ্য ছিল বিমানটি ইসরায়েলে নিয়ে কোন দালানে বিধ্বস্ত করা।কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারে তা সম্ভব হচ্ছে না, তখন বিমানের মার্কিন নাগরিকদের হত্যঅ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনা শুরুর ১৭ ঘণ্টা পর ছিনতাইকারীরা যথেচ্ছ গুলি করা আর বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু করে।নীরজা বীরত্বের পরিচয় দেয়, জঙ্গিদের কাছ থেকে যাত্রীদের মুক্ত করে নিজের জীবন দিয়ে। সেই ঘটনায় ৩৭৯ জনের মধ্যে ৩৫৯ জন যাত্রীর প্রাণ বাঁচান নীরজা। দেশসেবার এক অন্য নজির তৈরি করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন নীরাজ পান্ডে। তার প্রায় সব ছবিরই মূল বিষয় এই জঙ্গিবাদ। আমির খান ও নাসিরুদ্দিন শাহ অভিনীত সরফরোস সিনেমাটিতেও উঠে এসেছে জঙ্গি হামলা। দেশবিরোধীরা কিভাবে সমাজে ভালো মানুষ সেজে বসে থাকে, সেই গল্প দেখানো হয়েছে। প্রায় প্রতিবারই স্বাধীনতা দিবসে সিনেমাটি কোনও না কোনও চ্যানেলে দেখানো হয়। নানা পাটেকরের সিনেমা মানেই রুদ্ধশ্বাস কিছু থাকবে। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার প্রেক্ষাপটে তৈরি দ্য অ্যাটাকস অব ২৬/১১ সিনেমাটি। একটার পর একটা দুর্দান্ত ডায়লগ ডেলিভারি, সেই শীতল চাউনি- মনে গেঁথে থাকে একদম। ছবির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন নানা পাটেকার। সুইসাইড বোম্বার নিয়ে মনি রত্নম তৈরী করেন দিল সে। রোজা এবং বম্বের পর নির্মাতা মনি রত্নম সন্ত্রাসবাদকে আরো একবার পর্দায় নিয়ে আসেন ১৯৯৮ সালে। এর আগে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে তার করা প্রথম দুটো ছবি থেকে দিল সে অনেকটা আলাদা। সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল বিদ্রোহী এবং ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে সংঘাতপূর্ণ একটি অঞ্চলের প্রেক্ষাপটে। সিনেমাটির মূল মঞ্চ ছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অশান্ত রাজ্য আসাম। এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে এটাই ছিল বলিউডের নির্মিত প্রথম মেইনস্ট্রিম সিনেমা। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে, শুধু পাকিস্তান নয়। ভারতেও রয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। জঙ্গিবাদ নিয়ে অনুরাগ ক্যাশ্যপ বানিয়েছিলেন ব্ল্যাক ফ্রাইডে। হুসেন জ়াইদির উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ হয়। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই ব্লাস্ট ও তার পরের অবস্থা নিয়ে তৈরি হয়েছিল সিনেমাটি। ব্ল্যাক ফ্রাইডে-কে প্রথমে ব্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত সরকার। পরে অবশ্য সেই নির্দেশ তুলে নেওয়া হয়। এছাড়াও বলিউডে জঙ্গিবাদ নিয়ে নির্মিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা ফানা, ফিজা, রোজা, মাদ্রাস ক্যাফে, ডি ডে, হায়দার, মুম্বাই মেরি জান, দ্রোহকাল, ওমের্তা,আমির,নিউ ইয়র্ক,মাই নেম ইজ খান, ব্লাক অ্যান্ড হোয়াইট,ম্যাচিস,দেব,কুরবান ছবিগুলো। এমইউ/০১:৫৫/১৮ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2DMkiaa
February 18, 2019 at 07:53PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন