কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি- সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতে ধর্নায় বসেছিলেন। কিন্তু এই রাজ্যেই বহু পুলিশ কর্মী নীরবে যোগ দিচ্ছেন অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও মর্যাদার অন্য চাকরিতে! প্রশ্ন উঠছে, এর রহস্য কী? কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে তৎপর হয়েছিলেন রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর তিনি ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল ধর্না মঞ্চ থেকে ভারতীয় পুলিশ বাহিনীকে রক্ষা করার ডাকও দিয়েছিলেন। এই ঘটনাক্রমে মনে হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের কর্মীরা সরকারের ছাতার আশ্রয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়েই দেখা যাচ্ছে, পুলিশের চাকরির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন পুলিশকর্মীদের একটা অংশ। গত ৮ বছরে শুধু ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট পদ থেকেই প্রায় ৬০ জন ইস্তফা দিয়েছেন। ডয়চে ভেলে জানায়, অতি সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কন্ট্রোলে কর্মরত সার্জেন্ট করুণাময় চট্টোপাধ্যায় কলকাতা পুলিশের চাকরি ছেড়ে রেলের গ্রুপ ডি পদে যোগদান করেছেন। বেতন ও মর্যাদা তো বটেই, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকেও যা পুলিশের চাকরির সঙ্গে তুলনীয় নয়। তার চাকরি ছাড়ার আবেদন ঘিরে পুলিশমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, ভালো বেতন ও সম্মানের চাকরি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত কম বেতন ও নিচু পদের চাকরিতে যোগদান কি তবে পুলিশি পেশায় বিরক্ত হয়েই? অনেকের মতে, পুলিশের চাকরিতে স্বাধীনতার অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং সর্বোপরি পুলিশ হেনস্থার যে সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে, তাতে এই চাকরি মোটেও আর সম্মানের নয়। এর পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের রয়েছে নানাবিধ অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক কর্মচারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ঠিকঠাক বেতন পেলেও পুলিশরা ভালো নেই। কাজের চাপ এত বেশি যে, ছুটিই পাওয়া যায় না। পাশাপাশি বিমার জন্য টাকা কেটে নিলেও ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যায় না। আমাদের যা কিছু অভাব-অভিযোগ তা যদি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে যাই, তাহলে বদলির আশঙ্কা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষ অশ্রদ্ধা করে, ওপরতলার চাপ তো আছেই। এ জন্যই অনেকে চাকরি পরিবর্তন করে স্কুলে জয়েন করেছেন বা বাড়িতে ব্যবসা শুরু করেছেন। পুলিশমহলের অনেকেই স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক প্রভাবে পুলিশ ঠুঁটো জগন্নাথ, কাজেও স্বাধীনতা নেই। রাজনৈতিক চাপে পিষ্ট পুলিশমহলকে যখন তখন রাজনৈতিক কর্তারা অপদস্থ করে থাকেন। এ ব্যাপারে নজির গড়েছেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত ম-ল। পুলিশ যে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না সেটার প্রেক্ষিতেও বহু উদাহরণ আছে। অতীতে পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়ে সেই মামলায় খালাসও পেয়ে গিয়েছেন তিনি। রায় দেওয়ার আগে বিচারকও তার মন্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার মূল কারণ পুলিশি ব্যর্থতা। এ ব্যাপারে প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় বলেন, পুলিশকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিস্থিতি নেই। দেশের ভয়ংকর গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে আজ পুলিশকে যদি বোমা মারাও হয়, তা-ও পুলিশ কিছু করতে পারবে না। এই প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশকে যেভাবে দুর্বৃত্তদের কথা অনুযায়ী চলতে হচ্ছে, সেটা আগে এতটা ছিল না। অবস্থার অবনতি হতে হতে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে। সে কারণেই বিবেকের তাড়নায় আজ অনেকে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। একই সুরে প্রাক্তন আইপিএস নজরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ চিরকালই শাসকদলের হয়ে কাজ করে এসেছে। এটা নতুন নয়। তবে আগের সরকারের আমলে যেটুকু রাখঢাক ছিল, এই সরকারের আমলে সেটাও নেই। মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না মঞ্চে যেভাবে আইপিএস অফিসাররা বসে ছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয়ে, সেটা থেকে এটা স্পষ্ট। বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত ম-ল অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, তিনি মুখ ফস্কেই পুলিশের বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা কথা বলে থাকেন। তিনি বলেন, এমনিতে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। পুলিশদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন। যা কিছু বলেছি, তা আসলে স্লিপ অফ টাং হয়ে গেছে। তবে নজরুল ইসলাম মনে করেন, পুলিশরা যদি সৎ থাকতেন, তাহলে অনুব্রতর এমন বলার সাহস থাকত না।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2It9Ji3
February 16, 2019 at 01:00AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন