ঢাকা, ২৪ মার্চ- জয় বাংলা, বাংলার জয় দেশাত্ববোধক ও জাগরণমূলক একটি গান। ১৯৭০ সালের মার্চে গাজী মাজহারুল আনোয়ার এই গানটি রচনা করেন। তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির বঞ্চনা-দুর্দশা আর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাকে ছন্দময় করে গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর এই গানেই কণ্ঠ দিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ। শুধু জয় বাংলা, বাংলার জয় নয়, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা এরকম আরো বেশকিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শাহনাজ। প্রিয় শিল্পীর শেষ বিদায়ের আগে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শাহনাজ রহমতউল্লাহর বাড়িধারার বাসায় এসেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সেখানে তিনি মুখোমুখি হন গণমাধ্যম কর্মীদের। শাহনাজ রহমত উল্লাহ প্রসঙ্গে গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, এক একজন বড় মাপের শিল্পী অ্যাম্বাসেডেরের ভূমিকা পালন করেন। আজকে যদি ভারতের দিকে তাকাই দেখবেন, লতা মঙ্গেশকরের নাম বললেই সারা বিশ্ব তাকে এক নামে চেনে। পাকিস্তানি নুরজাহানের নাম বললে সারা পৃথিবী এক নামে তাকে চেনে। তেমনি বাংলাদেশের কিছু শিল্পী আছেন যাদের নাম বললে সারা পৃথিবীর মানুষ চিনবে। শাহনাজ রহমতউল্লাহ তাদের মধ্যে একজন। সংগীত জগতে বাংলার অ্যাম্বাসেডর ছিলেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ। স্বাধীনতা যুদ্ধে আপামর শিল্পীদের অবদান কোনো অংশে কম নয় জানিয়ে গাজী মাজহার জানান, আমরা যে স্বাধীনতার যুদ্ধটা করেছি শারীরিকভাবে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করছি নিজেদের, সে দাবীর পেছনে আমরা মনে করি সংগীত অঙ্গনের মানুষের ভূমিকা অত্যন্ত স্পষ্ট। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আমরা প্রচার করতাম জয় বাংলা বাংলার জয়/জয় বাংলা বাংলার জয়/হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়/কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে/নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়। আমারই লেখা এরকম আরো বেশ কিছু গান। সে সব গান গুলোর মধ্যে শাহনাজ রহমতউল্লাহ ও আব্দুল জব্বারের কন্ঠ ছিল এবং এরকম আরো বহু শিল্পীর কন্ঠ ছিল। তাদেরকে হারিয়ে ফেলা সত্যিই বেদনাদায়ক। শিল্পীদের যাতনার দিকটি উল্লেখ করে প্রখ্যাত এই গীতিকার-সুরকার বলেন, শিল্পী তৃপ্তির জন্য কাজটি করেন, খ্যাতির জন্য নয়। আমি যখন চলচ্চিত্রের গানে নাম লিখেয়েছি তখন আমার বাবা বলেছিলেন তুমি হয়তো জানো না, এই অঙ্গনের মানুষদের কেউ শেষ পর্যন্ত মনে রাখে না, এই অঙ্গণে যারা বিরাজ করে জীবনের শেষ বেলায় পয়সার অভাবে কোনঠাসা বোধ করেন। সেই পরিস্থিতিতেই যেন আমরা এসে পৌঁছেছি। তারপরও বলবো, এমন কীর্তিমান শিল্পীদের যেন দেশের মানুষ মনে রাখেন। বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর জানাজা যোহরের নামাজের পর বারিধারা পার্ক মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তার স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ। ব্যক্তি জীবনে শাহনাজ রহমতউল্লাহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। মেয়ে নাহিদ রহমত উল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ থাকেন কানাডায়। শাহনাজ রহমত উল্লাহর ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন এদেশের প্রখ্যাত একজন সুরকার এবং সংগীত পরিচালক। আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক। এক নদী রক্ত পেরিয়ে, একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল্, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ-এর মতো বেশকিছু দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমত উল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায় গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী এই সংগীতশিল্পীকে ১৯৯২ সালে একুশে পদক দেয়া হয়। ২০১৬ সালে চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-এর আয়োজনে আজীবন সম্মাননা জানানো হয় গুণী এই শিল্পীকে। সূত্র: চ্যানেল আই এমএ/ ১০:০০/ ২৪ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2HEG7Nn
March 25, 2019 at 04:20AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top