আয়ুষ্মান খুরানার বলিউডে আগমনই যেন হিরোর তথাকথিত নির্মাণ ভেঙে নতুন করে গড়ার জন্য। এই অন্য রকম হিরো তাঁর প্রতিটা ছবি দিয়ে বলিউডকে এক বার্তা দিয়েছেন, তিনি সবার থেকে আলাদা। মনে মনে ভাবছেন, কেউই তো কারও মতো হয় না, প্রত্যেকেই আলাদা। হ্যাঁ, তবে আয়ুষ্মান খুরানা যেন একটু বেশিই আলাদা। ২০১২ সালে ভিকি ডোনার চলচ্চিত্রে একেবারেই অন্য রকম চরিত্র দিয়ে বলিউডের খাতা খোলেন তিনি। আয়ুষ্মান খুরানা সেই চরিত্র না করলে কেউ হয়তো জানতেই পারত না, এমনও হিরো হয়। ভিকি অরোরা নামে সিনেমার সেই হিরো সুইজারল্যান্ডের চমৎকার ফুলবাগানে নাচেন না, আইসল্যান্ডে পড়ে থাকা উড়োজাহাজে চড়ে গানও গান না, জানেন না ঢিশুম-ঢিশুমও। তবে সেই নায়ক স্পার্ম ডোনেট করেন! এর ফলে ৫৩ জন নারী পান সন্তান ধারণের অপার্থিব অনুভূতি। একরকম নীরবে-নিভৃতে বলিউডকে উপহার দিয়েছেন দম লাগাকে হাইশা, শুভ মঙ্গল সাবধান, বাধাই হো, আন্ধা ধুন, মেরি পেয়ারি বিন্দুর মতো ভিন্ন স্বাদের ছবি। এসব ছবিতে আয়ুষ্মান দেখিয়েছেন, নায়ক হলেই যে একেবারে নিখুঁতভাবে সবকিছুতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হতে হবে, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র নেই। বলিউডের একজন হিরোর সিনেমার নাম হতে পারে ড্রিম গার্ল! বলিউডের সিনেমায় নায়ক হতে পারেন একজন সাধারণ মানুষও। নায়ক হতে পারেন পুরুষত্বহীন, অন্ধ পিয়ানোবাদক বা একজন প্রেমে ব্যর্থ লেখক। নিয়ম ভেঙে সেই নায়কের স্ত্রীর ওজন হতে পারে ৯৬ কেজি। আবার তাঁকে তিনি ঠিক ততটাই ভালোবাসতে পারেন, যতটা কাভি খুশি কাভি গম ছবিতে শাহরুখ কাজলকে ভালোবেসেছেন। আয়ুষ্মান এমন হিরো, যার কি না জ্বর হয়। এমনকি হিরোর সঙ্গে যখন হেরোইনের প্রেমটা জমে উঠেছে, তখনই বেখাপ্পা একটা ঘটনা ঘটতে পারে। নায়কের ঘরে জন্ম নিতে পারে একটা ছোট ভাই! এ রকম নায়ক আপনি আগে দেখেছেন? শুধু আপনি কেন, আয়ুষ্মান পা রাখার আগে বলিউডই দেখেনি। আর এখানেই আয়ুষ্মান সবার থেকে আলাদা। আয়ুষ্মান খুনারাকে নিয়ে তাই মাতামাতিও খুব একটা হয় না। কারণ কিছু নায়ক আছে, তাঁরা যা-ই করবেন, তা-ই হেডলাইন হবে। আর আয়ুষ্মান খুরানা সেই তালিকায় পড়েন না। সম্প্রতি আয়ুষ্মান খুরানা শিরোনাম হয়েছেন আর্টিকেল ফিফটিন চলচ্চিত্র নিয়ে। এটিও এমন একটি চলচ্চিত্র, অন্য সব হিরোরা যেসব ছবি করেন না; মনে করেন, ক্যারিয়ার পড়ে যাবে। অথচ আয়ুষ্মান বললেন একেবারেই উল্টো কথা। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর্টিকেল ফিফটিন বলিউডের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক আর গুরুত্বপূর্ণ ছবি। এই চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশের শুটিং হয় লক্ষ্ণৌতে। এখনে আয়ুষ্মান জোঁকভর্তি নোংরা ডোবায় অভিনয় করে জানালেন, অভিনয়ের জন্য সব করতে পারেন তিনি। এই ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানান পুরো দলকে। আরও ধন্যবাদ জানান জীবনের মোড় ঘোরানো এই যাত্রায় যুক্ত থাকা সহকর্মী আর টেকনিশিয়ানদের। পরিচালক অনুভব সিনহার প্রশংসা করে তিনি আর্টিকেল ফিফটিন ছবিকে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক আর গুরুত্বপূর্ণ ছবি বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি তাঁর চরিত্রের ত্রিমাত্রিক একটি ছবিও পোস্ট করেন। এই সিনেমায় তাঁকে অভিনয় করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সহঅভিনেতা রঞ্জিনী চক্রবর্তী আর আশীষ ভর্মাকেও ধন্যবাদ জানান। বলিউড অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানা যখন কলেজের ছাত্র, তখন লোকাল ট্রেনে গান গেয়ে টাকা তুলতেন যাত্রীদের কাছ থেকে। তখন জানতেন, তারকার সন্তান না হয়েও মাত্র পাঁচ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত প্রথম ছবিই কুড়িয়ে আনবে ৪০ কোটি রুপি! যাঁরা বলছেন, অর্থ দিয়ে কিছুই বিচার করা যায় না। তাঁদের জন্য বলছি, এই ছবি দিয়ে আয়ুষ্মান খুরানা ঘরে তোলেন নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার, আইফা, জি, স্ক্রিন, স্টার ডাস্টসহ প্রায় সব পুরস্কার। শুধু তা-ই নয়, এই সিনেমার পানিদা রাং গান দিয়ে সোনু নিগম-মোহিত চৌহানদের ডিঙিয়ে ফিল্মফেয়ারে শ্রেষ্ঠ গায়কের পুরস্কারও হাতে তুলে নেন তিনি। কফি উইথ করণ অনুষ্ঠানে এসে অকপটে জানান, শুধু সিনেমায় নয়, বাস্তবেও স্পার্ম ডোনেট করেছেন তিনি। বলিউডে এসে সত্যি-মিথ্যা মেশানো আলো-ঝলমলে জগতের গল্প পাশে রেখে করেছেন অন্ধকারের গল্প। সংবাদমাধ্যমকে শুনিয়েছেন কাস্টিং কাউচ নিয়ে ব্যক্তিগত ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। ছবিতে নেওয়ার জন্য কাস্টিং ডিরেক্টর গোপনাঙ্গ দেখাতে হবে বলে দাবি করেছিলেন! শর্ত শুনে সেখান থেকে পালিয়েছিলেন আয়ুষ্মান। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এখনো তাড়া করে এই অভিনেতাকে। স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে সিনেমার নায়কের মতো পাশে থেকে আশা জুগিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন, দেখিয়েছেন জীবনের স্বপ্ন। রোডিস টু দিয়ে আসা এই তারকার উপস্থাপক, গায়ক, অভিনেতার বাইরে বড় পরিচয়, তিনি একজন বাবা! আয়ুষ্মান খুরানার বাবা একজন জ্যোতিষী। এটা শুনে অভিনেতাদের গোলটেবিলে বসে অক্ষয় কুমার মজা করে বলেছিলেন, তাই তো বলি, সব ছবি হিট হয় কেন। এখন বুঝলাম। আচ্ছা, ছেলে যে এত কিছু করবেন, ছোটবেলায় বাবা কি হাত দেখে বুঝেছিলেন? এমএ/ ০৬:২২/ ১০ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2VyPtxq
April 11, 2019 at 12:46AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন