ঢাকা, ২৫ সেপ্টেম্বর - নকল তারকা হতে অভিনয়ে আসা এখনকার নায়ক-নায়িকাদের মেকআপ তুললে আর পোশাক পরিবর্তন করলেই তারকাখ্যাতি খসে পড়ে বলে জানালেন বাংলা চলচ্চিত্রের নন্দিত অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। অভিনয়শিল্পীদের তারকাখ্যাতির ভেতর-বাহির নিয়ে মুখোমুখি হলেন কবরী। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গী বাজারের স্কুল পড়ুয়া কিশোরী মিনা পালের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরী নামে; সুভাষ দত্তের সুতরাং চলচ্চিত্রে। প্রথম চলচ্চিত্রে দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার পর ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম, জহির রায়হানের বাহানার মতো দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন; অভিনয় গুণে পেয়েছেন আকাশচুম্বী তারকাখ্যাতি। তখন শিল্পীরা এফডিসিতে আসতেন অভিনয় করতে আর এখন শিল্পীরা শুধু তারকা হতেই আসেন বলে জানালেন অর্ধ শতকের ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের এ অভিনেত্রী; সেকারণেই আলাদিনের চেরাগের মতো পাওয়া তারকাখ্যাতিও পোশাক আর মেকআপ বদলের সঙ্গে খসে পড়ছে। এখনকার অভিনয়শিল্পীরা শুধু তারকা হতে চায়, নকল তারকা। মেকআপ তুললেই সেই তারকাখ্যাতি খসে পড়ছে। পোশাক পরিবর্তন করলেই তাদের গ্ল্যামার খসে পড়ছে। তারকা গিমিকের মতো আরকি। অনেক ধরনের তারকা আছে। অভিনয় কিছুই পারে না- শুধু নামে চেনে সেও তারকা। তারকা হয়ে উঠার জন্য গ্ল্যামারের চেয়ে ভালো অভিনয় করাই অধিক জরুরি বলে মনে করছেন কবরী। আমি যদি ভালো অভিনয় করতে পারি, মানুষের মন কাড়তে পারি, আমি হয় তো ওই রকম গ্ল্যামারাস নই তারপরও তাকে তারকা বলতে পারি। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের প্রধান আকাঙ্ক্ষাই হলো সেলিব্রেটি হওয়া। সেলিব্রেটি হতে চাওয়া এই নায়ক-নায়িকারা ভালো কিংবা মন্দ কোনো কাতারেই পড়ে না জানিয়ে তিনি বলেন, তারা শুধু রোজগারের জন্য অভিনয় করছেন। পেশা আর রোজগারের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। আমি সুন্দর কাজ করব, সুন্দর চরিত্র পাবো কি না, প্রতিযোগিতায় টিকতে পারব কি না-এই ধারণা যদি কারও মধ্যে থাকে তবে সে ভালো অভিনয়শিল্পী হতে পারবে; ভালো মানুষ হতে পারবে। অন্যথায় শুধু রোজগারের জন্য যারা আসে অভিনয়ে তাদের কোনো মনোযোগ আমি দেখি না। তাদের জন্য কোনো পরামর্শও দিতেও অনাগ্রহী বলে জানালেন এ অভিনেত্রী। জানালেন, বেশ কয়েকটি নাটকে এখনকার অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে বুঝেছি, এরা কারও কথা শোনে না। এদের কিছু বলে লাভও নেই। কবরীর তারকা জীবন তারকা হতে চেয়ে অভিনয়ে এসে নয়, অভিনয়ে এসে দিনে দিনে পরিশ্রম করে তারকা হয়েছেন রাজ্জাক, বুলবুল, ফারুক, কবরী, ববিতাদের মতো শিল্পীরা; মৃত্যুর পর কিংবা অভিনয় ছাড়ার পরও ভক্তদের হৃদয়ে এখনও তারা অমলিন। কবরীর তারকা জীবন কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্মৃতির অলিন্দ থেকে তুলে আনা অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তিনি, মানুষের কাছাকাছি যেতে পারি না। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকতে হয়। মানুষের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্যও অনেকে এটা করে। কারণ বাজারে ২৪ ঘণ্টা ঘুরলে কোনো তারকার আর দর থাকে না। তারকারা যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে তা সাধারণ মানুষকেই প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে না পারলে চরিত্রায়নে কোনো প্রভাব পড়ে? এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না তিনি। জানালেন, চট্টাগ্রামের একটি হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পর পুরো জীবনটাই শহরে কেটেছে তার; তবে অনেক চলচ্চিত্রেই গ্রামের নারীর চরিত্রও তুলে এনেছেন পরিচালকের চিত্রনাট্য ধরে। পরিচালক যখন কোনো চিত্রনাট্য বুঝিয়ে দেন সেটা ভালোভাবে রপ্ত করি। একেবারে সাধারণের সঙ্গে যে মিশি না তা কিন্তু নয়; আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েকে দেখি। সুতরাং চলচ্চিত্রে গর্ভবতী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। বাচ্চা হলে পেট ব্যথা করে কি না সেটাও তখন জানতাম না। সেটা মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। এর বাইরে চলচ্চিত্র দেখে, বই পড়ে নিজেকে ঋদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন বলে জানান তিনি। এন এইচ, ২৫ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2n76iTR
September 25, 2019 at 09:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন