ঢাকা, ১১ সেপ্টেম্বর- কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান। শুধু চলচ্চিত্রের গানেই নয়, অডিও গানেও তিনি সমান জনপ্রিয়। চার দশকের সমৃদ্ধ সংগীত ক্যারিয়ার তার। আজ এই গুণী শিল্পীর জন্মদিন। বিশেষ দিনটি ঘিরেই এ আয়োজন। আনন্দময় শৈশব আমার জন্ম ঢাকাতেই। বাবা-মায়ের তৃতীয় কন্যা আমি। আমরা পাঁচ ভাইবোন। ছোটবেলায় সাধারণত অনেক শিশুই চঞ্চল থাকে, দুষ্টু থাকে। আমি দুষ্টু ছিলাম না। তবে স্বল্পভাষী ও বুদ্ধিদীপ্ত ছিলাম। শৈশবে ভাইবোনদের সঙ্গে খুব মজার সময় কাটত। আমার সব ভাইবোনও গান গাইতে পারে। সবাই এক সঙ্গে গান করতাম। ছবি আঁকতাম। আমিই সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতাম। তা না হলে পর পর দুই কন্যার পর তৃতীয় কন্যা হিসেবে আমার কপালে অবহেলা জুটতে পারত। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক শুকরিয়া তিনি আমাকে আনন্দময় শৈশব দিয়েছেন। শিল্পী হওয়ার গল্প বাবার খুব শখ ছিল তিনি গান করবেন। কিন্তু বাবার সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। আমাকে দিয়ে তার ইচ্ছাটা পূরণ করতে চেয়েছেন। গানের শুরুটা বাবার কাছেই। তিনিই আমার প্রথম ওস্তাদ। এ ছাড়াও তিন গানপাগল মানুষ মোহাম্মদ মেসের উদ্দিন ভাই, তোফাজ্জল হোসেন ভাই ও জালাল উদ্দিন ভাইয়ের কাছে কিছু ছবক নেই। তার পর বাবা খুঁজে বের করেন ওস্তাদ ফজলুল হক সাহেবকে। কিন্তু তার কাছে আমার মাত্র এক দিন সারেগামাপা ছবক নেওয়ার সুযোগ হয়। এর পর আমি সত্যিকার অর্থে উচ্চাঙ্গ সংগীত এবং গজল ভজন ঠুমরী দাদরা টপ্পা শিখি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী এবং সংগীত বিশেষজ্ঞ বশীর আহমেদ সাহেবের কাছে। অনেক কষ্ট সয়েও আমার বাবা আমাকে শিল্পী বানানোর স্বপ্ন দেখতেন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। আর আমার স্বামী সুরকার সংগীত পরিচালক মইনুল ইসলাম খান সাহেব আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে গাইতে হয়। আর যাদের সুরে গান গেয়েছি সবার কাছেই আমার সংগীত শেখার কৃতজ্ঞতা। গানের প্রতিযোগিতায় বাবা আমাকে বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতায় নিয়ে গেছেন। গান শেখানোর জন্য তিনি হাল ছাড়েননি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। প্রথমে প্রতিযোগিতায় যেতে ইচ্ছে না করলেও যখন আমি ফার্স্ট হয়েছি তখন খুবই ভালো লাগত। বাবার ইচ্ছা, অনুপ্রেরণার কারণেই আমি এত দূর আসতে পেরেছি। ১৯৭৮ সালে নতুন কুঁড়িতে শিশুশিল্পী হিসেবে অংশ নেই। এর পর খেলাঘর, চাঁদের হাট, ওয়াপসকা আরও কত জায়গায় যে গান গেয়ে প্রথম হয়েছি ঠিক মনে পড়ছে না। প্রথম প্লেব্যাক ১৯৮৪ সালে নজরুল ইসলাম পরিচালিত বিধাতা চলচ্চিত্রে গান গেয়ে আমার আত্মপ্রকাশ। তিন হাজারের মতো চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গুণী সুরকারদের সান্নিধ্যে মইনুল ইসলাম খান অসম্ভব সুন্দর গান করেন। কিন্তু তার গান অনেক কঠিন। তার মৌলিকতা আমার খুবই পছন্দ। শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আলী- অত্যন্ত উঁচু মাপের সুরকার ছিলেন। শ্রদ্ধেয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল- তিনি খুবই দরদ দিয়ে গান করতেন। যেহেতু নিজে লিখেছেন ও সুর করেছেন তাই তার গান হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আজকের আমার এ অবস্থানে আসার পেছনে মইনুল ইসলামের পর যার অবদান বেশি তিনি হলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। শ্রদ্ধেয় আলম খান- তার সঙ্গে আমার অপূর্ব কিছু স্মৃতি আছে, অসম্ভব বিনয়ী ও ভদ্র একজন মানুষ। এ ছাড়াও কাজ করেছি শ্রদ্ধেয় সংগীত পরিচালক সুরকার শেখ সাদী খান, খন্দকার নুরুল আলম, সেলিম আশরাফ, শওকত আলী ইমন, ইমন সাহা ও আলী আকরাম শুভর সঙ্গে। পুরস্কার ও সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (তিন বার) থেকে শুরু করে মেরিল-প্রথম আলো পর্যন্ত যত পুরস্কার আছে সব একাধিকবার পেয়েছি। তবে দর্শকদের ভালোবাসা আমার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার। একজন টোকাই আমাকে ৪টি তুলার পাখি উপহার দিয়েছে। এটা আমার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। পারিবারিক জীবন বাবা আজিজুল হক মোর্শেদ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং চিত্রকর ছিলেন। মা মোমেনা জাহান একজন ইসলামি চিন্তাবিদ এবং সমাজসেবক। স্বামী মইনুল ইসলাম খান একজন সংগীত পরিচালক ও সুরকার। এক ছেলে ফাইজুল ইসলাম খান মাশুক এবং এক কন্যা ফারিয়া ইসলাম খান। আমার তিন নাতি নাতনি- জুওয়াইরিয়া ইসলাম, আমমার বিন ইয়াহইয়া ও খাদিজা ইসলাম খান। আজকের দিনে জীবনের অর্ধশত বছর কাটিয়েছি অপূর্ব কর্মচঞ্চলতায়, অধ্যবসায় ও সততা নিয়ে এক সফল অধ্যায় সংবলিত সুখের জীবন আমার। লাখো মানুষের ভালোবাসা আমার সঙ্গে এই অনুভব আমার সঞ্জীবনী সুধা। মা আমার চোখের মণি- তার দোয়া নিয়ে আমি আছি আলহামদুলিল্লাহ। তবে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবী আমাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে। কোটি মানুষ আজ চাকরিহারা। কত মানুষ পৃথিবী থেকে চলে গেছে। আমাদের বটবৃক্ষের মতো বড় বড় শিল্পী চলে গিয়ে সাংগীতিক জগতে এতিম করে দিয়ে গেছেন। সেই দিক থেকে আমার নতুন ও বাকি অর্ধশত বছরের বা দ্বিতীয়ার্ধের বছরটি খুবই মন খারাপ দিয়ে শুরু হলো। তবে আমি বিশ্বাস করি রাত যতই গভীর হয় ভোর ততই নিকটে আসে। নিশ্চয়ই সামনে ভালো কিছু আছে সেই অজানা কিন্তু আকাক্সিক্ষত ভালোর জন্য আমার এ বছরের অপেক্ষা। সারা বছর প্রায় ঘরবন্দি থেকে ভালোই হয়েছে। আমি আমার ভাবনাকে আরও গভীরে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এত দিন তো কোনো সময়ই পাইনি। আমার এ বছরের জন্মদিনে আমি আমার আমিকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চাই। জন্মদিন মানেই মৃত্যুদিনের কাছে এগিয়ে যাই এ ভাবনা থেকে আমি সরে আসিনি। তবে জন্মদিনে নাতিনাতনি যদি আমার সঙ্গে ওই দিন নির্মল আনন্দে মেতে থাকে সেটুকুই আমার জন্য অনেক পাওয়া হবে। একান্ন বছরে পা দেব এটা দারুণ অনুভূতি। সিনিয়র হয়েছি। চুল পাকছে। পরিপক্ব হচ্ছি। ভাবনায় স্থিরতা আসছে; তবে আমি এই দ্বিতীয়ার্ধে আমার তৃতীয় নয়ন উন্মোচিত করতে চাই। সুখী অবসর জীবন কাটাতে চাই। বগুড়ায় আমার এক খ- জায়গা আছে। সেখানে এই পৃথিবীর অস্থায়ী আবাস করে সেখানে দ্বিতীয় এপিসোড বাস করতে চাই কোলাহলমুক্ত ছায়াবীথিতে। সাংগীতিক জগতে যদি আমাকে কখনো দরকার পড়ে, আমি আসব। তবে আগের মতো এত ব্যস্ত হতে চাই না। আমি বুঝতে পারি সবার একটা সেরা সময় থাকে সেই অধ্যায়টি আমি নিষ্ঠার সঙ্গেই সাংগীতিক জগৎকে দিয়েছি। প্লেব্যাক করেছি শ্রমিকের মতো। বিনিময়ে মেলা সম্মান পেয়েছি। এ জায়গা থেকে আমি আর কোনো কিছু পাওয়ার আশা করি না। আমার মনে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি দিয়েছি এবং পেয়েছি। এই দ্বিতীয়ার্ধে আমার দেনাপাওনা কিছু রইল না। আমি মুক্ত। এবারের জন্মদিনে এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের জায়গা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন স্বাভাবিক মৃত্যু উপহার পাই স্রষ্টার কাছে। আর কিছু চাওয়া নেই। লেখক জীবন ২০১০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হয় স্থবির যাযাবর, ২০১২ সালে মুখোমুখি যোদ্ধা, ২০১৬ সালে মেঘের ডানায় চড়ে এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত হয় জীবনীমূলক বই কাটা ঘুড়ি আরও পড়ুন- ভালো স্বামী ও বাবা হতে চান জাস্টিন বিবার জনপ্রিয় কিছু গান ১. এলোমেলো চুল আর ললাটের ভাঁজ ২. আমি নই বনলতা সেন ৩. আমি মেলা থেকে তালপাতার বাঁশি ৪. ছোট্ট একটা জীবন নিয়ে পৃথিবীতে কেন বলো আসা ৫. নীলাঞ্জনা নামে ডেকো না ৬. চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে ৭. তুমি আমার এমনই একজন ৮. অনেক সাধনার পরে ৯. তুমি মোর জীবনের ভাবনা ১০. তোমাকে চাই ১১. ভালো আছি ভালো থেকো ১২. যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে ১৩. নাকেরই ফুল বলে রে ১৪. আমার হৃদয় একটা আয়না ১৫. তোমায় দেখলে মনে হয় ১৬. আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে ১৭. অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে ১৮. কোন কাননের ফুল গো তুমি ১৯. কী জাদু করেছো বলো না ২০. তুমি জানো নারে প্রিয় প্রভৃতি। সূত্র: আমাদের সময় এমএ/ ১১ সেপ্টেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2DNH0CM
September 11, 2020 at 06:32AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top